ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কপিরাইট: জেনেও অজানা কিছু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
কপিরাইট: জেনেও অজানা কিছু কপিরাইট

আজ সকালের আগে আপনার মতো আমিও জানতাম না যে, আজ বিশ্ব কপিরাইট দিবস। সকাল সকাল সরকারি মেসেজ মোবাইলে ঢোকার পর থেকেই ভাবতে বসলাম। নিশ্চয়ই আপনি ভাবছেন, কপিরাইট দিবস, তো আমার কি? দৈনন্দিন চাল-ডাল আর ফাইল-পত্র কিংবা বেচা-বিক্রির জীবনে আবার কপিরাইট লাগবে কোন কাজে? এতদিন তো কপিরাইটের জ্ঞান ছাড়াই আমাদের পূর্বপুরুষেরা চলেছেন। তাদের তো এই কপিরাইট-টাইট কিছু লাগেনি।

সে কথাটা মানছি। কিন্তু, আমাদের পূর্বপুরুষদের ধারণা ছিল না এমন সহস্র বিষয় আমাদের জীবনে ঢুকেছে চুপিসারে।

মোবাইল, ইন্টারনেট, ফাস্ট ফুড তো গত দুই দশকের ফলাফল। দেশে কপিরাইট আইনের প্রচলন হয়েছে ২০০০ সালে। এই ১৯ বছরের জীবনকালে ২০০৫ সালে একবার সে আইন সংশোধনও হয়েছে।

কপিরাইট শব্দটার সাথে আমার পরিচয় ছোটবেলায়। স্যাটেলাইট চ্যানেলে অনুষ্ঠানের শেষে ছোট করে একটা বৃত্তের মধ্যে ‘সি’ লেখা দেখতাম। বড়দের জিজ্ঞেস করে শুধু জেনেছিলাম কপিরাইট নামে কিছু একটা আছে। তবে তা কোথায় আছে, তা জানার জো ছিলো না।

একটু বড় হতেই জানলাম কপিরাইট এক প্রকারের মালিকানা বা স্বত্ব। তবে, জমিজমার মতো পর্চা লাগে না। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন লাগে।

সবই তো বুঝলাম, কিন্তু কপিরাইট হবে টা কিসের? ছোটবেলার জ্ঞানটা কাজে লেগে গেছে। আইনেই বলা আছে কোন কর্মের কপিরাইট বিদ্যমান:
ক) সাহিত্য, নাট্য, সঙ্গীত ও শিল্পসুলভ আদি কর্ম
খ)চলচ্চিত্র/ছবি
গ) শব্দ রেকর্ডিং।
সেই সাথে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের স্বত্ব ও হস্তান্তর নিয়েও আছে বিধি-নিষেধ।
এবার তো আপনার যাবার সময় হলো, তাই না? ভাবছেন, উপরের কোনো কাজের সাথেই তো আমি যুক্ত না। তাহলে আমি কপিরাইট দিয়ে করবো টা কী?

কপিরাইট আইনে শুধু স্বত্বের কথাই বলা হয়নি। আছে লঙ্ঘনের শাস্তিও। তাহলে, সেটা আবার কেমন করে আপনার ব্যাপার হলো! আপনি তো ওসব বানানোর মধ্যেই নেই। লঙ্ঘনটা করবেন কী?

ভেঙে বলি। একজন একটা নাটক বানিয়েছেন। আপনি সেটা ভিডিও করে ছেড়ে দিলেন ইন্টারনেট জগতে, যা আমাদের কেউ কেউ হরহামেশাই করে থাকে। এটা কপিরাইট আইনের ১৪ । ১ (ক) ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরেকটা উদাহরণ দেই। কারও একটা লেখা খুব ভালো লাগলো আপনার। সে সাহিত্যকর্মের কিছুটা অংশ আপনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলেন, তাহলেও তা কপিরাইট পরিপন্থি।

তাহলে, এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, এই যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের এত রিমেক আর পপ ভার্সন হচ্ছে, তাতে কি কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে না। উত্তর জানতে হলে আমাদের আইনে ফিরলেই যথেষ্ট। একটা সংখ্যা মনে রাখুন, ৬০। একটা কর্মের প্রণেতা, প্রকাশ ইত্যাদির বিচারে কপিরাইটের মেয়াদ থাকে ৬০ বছর। সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রণেতার মৃত্যুর ষাট বছর পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকে। এজন্যই এটা লঙ্ঘন নয়।

এবার কপিরাইটের আরও একটু গভীরে যাই। খুঁজে পেতে পারেন নিজেকে। বিভিন্ন দোকান থেকে সিডি, ডিভিডি ভাড়া করেছেন কখনও? কিংবা কোন পাইরেটেড সফটওয়্যার ইনস্টল করে বন্ধুদের কাছে ক্রেডিট নিয়েছেন। আরও একটু আধুনিক মাধ্যমে আসি। হয়তো আপনি টরেন্ট থেকে মুভি ডাউনলোড করছেন অবলীলায়। তাহলে, আন্তর্জাতিক কপিরাইটের নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেছেন আপনি। এই সব অপরাধে হাজার হাজার মানুষ বিদেশের জেলে বন্দী রয়েছেন। একটু উদাহরণ দিয়েই বলি। এক্সট্রা টরেন্ট, কিকঅ্যাস টরেন্টের মতো সাইটগুলোর মালিকেরা কিন্তু এখনও শিকের পেছনে বন্দী।

পৃথিবীতে তাহলে কি কপিরাইটের বাইরে কিছু নেই? বৃত্তের বাইরের ধারণা আছে সবখানেই। কপিরাইটের ধারণার অন্যমেরুতে চলছে কপিলেফট মুভমেন্ট। যেখানে, সাহিত্য বা শিল্পকর্মের প্রণেতা নিজেই সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন তার সৃষ্টিকে।

একেবারে শেষে এসে বলি, আইন না জানা শাস্তি এড়ানোর কোন উপায় হতে পারে না। তাই সময় থাকতে জেনে নিন কপিরাইটের সবকিছু। নিরাপদ হোক আপনার সৃজনশীল পথের সকল যাত্রা।

লেখক: মনদীপ ঘরাই; সিনিয়র সহকারী সচিব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।