ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বেঁচেই গেলে নুসরাত! ǁ মনদীপ ঘরাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
বেঁচেই গেলে নুসরাত! ǁ মনদীপ ঘরাই

অজানা তারিখের চিঠিতে লিখেছিলে, ‘আমি মরবো না, আমি বাঁচবো’ বেঁচেই গেছ তুমি। কোটি লাশের ভীড়ে তোমরাই এখন জীবিত। আর আমরা? বাসি মাছের ঝোলের মধ্যে শক্ত আলু হয়ে বেঁচে আছি। যাকে মুখে তুলতে রুচি হবে না কারও, আবার ডাস্টবিনেও ছুঁড়ে ফেলা হয়ে উঠবে না দরদে।

তোমার মৃত্যু কাঁদায়নি। যারা বলছে কেঁদেছে, ওটা কাব্যিক।

মন খারাপ হয়েছে সবার, সন্দেহ নেই। তবে, কেঁদেছে শুধুই কাছের মানুষেরা। তারা কেঁদেই যাবে আজীবন। আমাদের আক্ষেপ আর মন খারাপের এক ছটাকের বেশি তোমাকে দেয়া যাবে না। জমিয়ে রাখতে হবে ভবিষ্যতের এমন মৃত্যুর জন্য; যতদিন নিরাপদ না হবে আমার মা-স্ত্রী-বোন কিংবা অচেনা কোনো নারী।

নিরাপদ সড়কের জন্য পথে নামলো কতজন! উল্টোপথে হেঁটে সেই সমাজের চারপাশের মানুষেরা গড়ে তুলছে ‘নিরাপদ নরক’ সবাই ভেবে নেয়, যার সঙ্গে হচ্ছে হোক গিয়ে, আমার সঙ্গে হবে না অন্ততঃ। সেই বিশ্বাসের সড়কে হেঁটে দেখা মেলে নরকের। চোখ মেলে তাকানো জগতেই।

মানুষ শব্দটা এখন জাফরানের মতো দামি ও দুর্লভ। এক কেজি জাফরান কিনতে হলে যেমন ফতুর হতে হবে, তেমনি ফাস্টফুডের দোকানে গড়া শতকেজির দেহ থেকে এককেজি মানুষ পেতে খুঁজতে হবে লাখো জীব। নারীবাদী, পুরুষবাদী, পুঁজিবাদী, বাদী, বিবাদী। সবার একটা করে স্ট্যাটাস হবে।

এই দেখো না, আমিও লিখতে বসলাম। আসলে আমরা সবাই পরিণত হচ্ছি অমানুষ ধর্ষকগুলোর দাস ও দাসি বাঁদীতে। কিভাবে? ওই যে বললাম, ভেবে নিচ্ছি, ‘আমার কারও সঙ্গে হবে না!’ যেদিন তোমার অপরাধীর শাস্তি হবে, সেদিন আনন্দ মিছিলে তুমি থাকবে তো?

কতই না ভালো হতো, যদি অপরাধীর শাস্তি হলে তোমাকে ফিরে পেত তোমার পরিবারের মানুষগুলো! ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে ‘অগ্নি বীর’ উপাধি দেয়া হলো। তুমিও কী ‘অগ্নিযোদ্ধা’ না? দুজনের আগুন প্রয়াণটা দুরকম কষ্ট দেয়।

প্রতিকার সবকিছু কেড়ে নেয়ার পর সান্ত্বনা পুরস্কার। দরকার প্রতিরোধ। ধর্ষককে হত্যা করা হারকিউলিসের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন ধর্ষণ ঠেকানো সুপার হিরো।

‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ টি শার্টের আলোচনাটা কিন্তু সমান্তরাল সময়েই চলছে। বহু আঙ্গিকে বহুপক্ষ নিয়েছে সবাই। আমরা মিলেমিশে মানুষ হতে পারলাম কই? অবলা কাক পর্যন্ত কাকের মাংস খায় না। আর আমরা? নিজেরাই নিজেদের লজ্জা দিচ্ছি নানান অপকর্মে। তাই শুনতে অশ্রাব্য হলেও বলি আবারও, ‘বেঁচেই গেলে নুসরাত!

আমরা প্রতিদিন ফিনিক্স পাখির মতো মরে আবার বেঁচে উঠি- নখ, দাঁত, শিরদাঁড়া আর মগজ ছাড়া। যাদের... আসল পুরুষের মেডেল ঝোলে গলায়। বিদায়...!

mondip

 

পরিচয়: লেখক ও সিনিয়র সহকারী সচিব

 

 


বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।