১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেওয়া জামায়াতে ইসলামী এক সময় উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ইসলামি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দলটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ও ইতিহাসের দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জামায়াত কার্যত রাজনীতিতে এক প্রকার পরজীবী শক্তিতে পরিণত হয়। কখনও আওয়ামী লীগের আবার কখনও বিএনপির ছায়াতলে দলটি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও জনগণের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়।
শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি, সন্ত্রাসের অভিযোগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানসিকতার কারণে দলটির প্রতি মানুষের ঘৃণা ছিল সুগভীর। জামায়াতকে দেখে এ দেশের জনগণ সব সময় সন্দেহ ও শঙ্কার চোখে দেখেছে। আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের শাসনে জামায়াত শুধু রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়নি, বরং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকারও হয়েছে। দলটির সভা-সমাবেশ, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আদর্শচর্চার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর রাজনীতির গতিপথ পাল্টে যায়। বন্ধ দরজাগুলো খুলে যায়, এবং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় যেখানে ‘জামায়াত’ শব্দটি উচ্চারণ করা যাচ্ছে নির্ভয়ে। যে নাম এক সময় গোপনে উচ্চারিত হতো, যে সংগঠন করাকে একপ্রকার গ্লানির বোঝা মনে করা হতো, সেই জামায়াত ও শিবির নিয়ে এখন মানুষ প্রকাশ্যে কথা বলছে। ‘আমি জামায়াত করি’, ‘আমি শিবির করি’— এই কথাগুলো বলা যাচ্ছে জনসভা থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত।
৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক দলগুলো স্বাভাবিক রাজনীতির ধারা ফিরে পেলেও জামায়াত যেন নতুন এক মুক্তি অর্জন করেছে। শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ অন্তত এই বার্তাই দিচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী সমাবেশে জামায়াত বাংলাদেশের সব গণহত্যার বিচার চেয়েছে। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ চেয়েছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহনগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। সমাবেশে ছিলেন শিবিরের নেতাকর্মীরাও। জুলাই আন্দোলনে আহতদের কয়েকজন ও অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানোদের অভিভাবকরাও অংশ নেন এই সমাবেশে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও তৎপরবর্তী সময়ে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশে নানা বির্তকের শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে জামায়াতের প্রধান ছিলেন গোলাম আজম। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে যান। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৮ সালের ১১ অগাস্ট দেশে ফেরেন গোলাম আযম। তার হাতে ছিল পাকিস্তানের পাসপোর্ট। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। কিন্তু তার কাছে বৈধ কোনো ভিসা ছিল না। শুধুমাত্র জন্মসূত্রে এদেশে থাকার অধিকার রয়েছে— এই অধিকারবলে দেশত্যাগে অস্বীকৃতি জানান তিনি। ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে থাকা গোলাম আজমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে।
১৯৭৫–১৯৮১ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। সে সময় জামায়াত রাজনীতি করতো ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) নামে। ১৯৭৯ সালে দলটি তার পুরনো নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে ফিরে আসে। এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেশ বিতর্ক রয়েছে।
স্বৈরাচার হিসেবে স্বীকৃত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে (১৯৮২-১৯৯০) জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা বেশ জটিল ছিল। তবে দলটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরোধিতা করায় দলটির নেতাকর্মীদের দমনপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল। রাজপথে আন্দোলন, সভা-সমাবেশে বাধা, নেতাদের গ্রেপ্তার কর্মীদের ওপর নির্যাতন, মামলা সবকিছু সহ্য করেছিল জামায়াত। এ পরিস্থিতিতেও ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ও কিছু আসনে জয়লাভ করে। এই পুরো চিত্রপটও বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। কেননা, সে সময়তার নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল এবং জামায়াতের নির্বাচনে বিভিন্ন আসনের জয় এরশাদের সমর্থনপুষ্ট বলে মনে করা হতো।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এক জোরালো গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হয়। সেদিনই সব দলের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। ৯ ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এবং বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। ১৫ ডিসেম্বর প্রথম উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সভায় মিলিত হন। সেই উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে নির্বাচনের আয়োজন করেন। ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি মোট ভোটের ৩০.৮১ শতাংশ অর্জন করে এবং জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসনে জয় পায়। আওয়ামী লীগ পায় ৩০.০৮ শতাংশ ভোট (৮৮ আসন)। জাতীয় পার্টি ৩৫টি (১১.৯২% ভোট) ও জামায়াতে ইসলামী ১৮টি (১.২২% ভোট) আসন পায়। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামীও বিএনপিকে সমর্থন দেওয়া থেকে সরে আসে। আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা, এরশাদ ও মতিউর রহমান নিজামী এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরকার পতনের দাবিতে জনগণকে একাট্টা হতে আহ্বান জানান। সেদিন স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, স্বৈরাচার সব এক হয়ে গিয়েছিল। তবে নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বিএনপি নেত্রী ও দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেন। জামায়াত তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন করেছিল। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ প্রায় প্রতিটি দল সেই নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনে জিতে সরকার গঠন করে। কিন্তু বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন বিএনপির পতন ডেকে আনে। উপায় না পেয়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে বেগম খালেদা জিয়া তার নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধানের একটি সংশোধনী আনলেন। সংশোধনী অনুযায়ী, তাতে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। সেই সরকারের প্রধান হন তৎকালীন সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান। তিনি ওই বছর জুনের ১২ তারিখ নির্বাচন আয়োজন করেন। আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের ১৫১ আসনে জয় পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পরে শেখ হাসিনার নেতৃতে আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। জামায়াতও ছিল সেই সরকারে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের দ্বিচারিতার কারণে দলটিকে এবড়োখেবড়ো পথ পাড়ি দিতে হয়।
জামায়াত আবার বিএনপির ছায়াতলে আসে ২০০১ সালে। সে বছরের ১ অক্টোবর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস পরাজয় হয়। বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয় পায়। আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৬২ আসন। বিএনপি লবির কারণে জামায়াত পায় ১৭ আসন। দুই দলের মিলনে জোট সরকার গঠিত হয় এবং জামায়াতের দুই সদস্য হন কেবিনেট মন্ত্রী। মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী হওয়ায় আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে। দলটি ‘মুক্তিযদ্ধের চেতনা’ সম্পর্কিত ক্যানভাসিং শুরু করে এবং জামায়াতকে সারা দেশে চরমভাবে বিতর্কিত করে তোলে।
এরপর লগি-বৈঠা ও ১/১১, মাইনাস-টু ফর্মুলার মতো পরিস্থিতি পাড়ি দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আয়োজিত হয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগ মহাজোট ও বিএনপি চারদলীয় ঐক্যজোট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। মহাজোট ২৬৩ আসন পায়। জামায়াত-বিএনপির জোট পায় মাত্র ৩৩ আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকে সরকারের দৌরাত্ম লোকে খালি চেখে দেখেছে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সবশেষ নির্বাচন করে। তার আগ পর্যন্ত রাতের নির্বাচন, আমি-ডামি নির্বাচন পর্যন্ত জামায়াত কখনো সরকারকে সমর্থন দেয়নি। এর মধ্যে দলটির মূল শক্তি ভেঙে ফেলে আওয়ামী লীগ। যুদ্ধপরাধের বিচারের নামে দলটির শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, হাজারো মামলা, গ্রেপ্তার, হামলা-নির্যাতন; জামায়াতকে কার্যত শেষ করে ফেলা হচ্ছিল।
২০২৪ সালের জুন মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জুলাইয়ে আন্দোলরে সরকারের পক্ষ থেকে সহিংস হয়ে উঠলে জামায়াত ছাত্রদের পক্ষে থাকার ঘোষণা দেয়। দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে হওয়া আন্দোলনে জামায়াত ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন হাসিনার সরকার উৎখাতের আন্দোলনে পরিণত হয়, জামায়াত আরও সক্রিয় অংশ নেয় এতে। ফলাফল, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে দেশে আওয়ামী লীগের হিংস্রতার ইতি ঘটে। দেশের মানুষের সামনে জামায়াত ফিরে আসে নতুন রূপে। ফ্যাসিস্টদের পতনের পর ইসলামি ছাত্রশিবিরও তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়। গত ১৫-১৬ বছর ছাত্রলীদের ভেতরে থেকেই নিজেদের রাজনীতি করেছে শিবির এমন দাবিও করা হয়।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন, দলীয় অফিস বন্ধ, নেতাকর্মীদের গুম-খুন-মামলার ঝড়, বিচারিক নিষেধাজ্ঞা— সব মিলিয়ে জামায়াতকে নিষ্ক্রিয় করে ফেরার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু জামায়াত তার সাংগঠনিক কাঠামোকে নীরবে রক্ষা করেছে, ছাত্রশিবিরকে নতুনভাবে সাজিয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতেই যখন ছাত্র, চাকরিপ্রার্থী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্মিলিত ক্ষোভ এক আগ্নেয়গিরির আকার ধারণ করে তখন অনেক জেলায় জামায়াতপন্থী ছাত্র ও পেশাজীবীরা সরাসরি মাঠে নামে। ঢাকায় নয়—বরিশাল, রাজশাহী, নওগাঁ, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তারা মিছিল-মিটিং করে জনমত উস্কে দেয়। পুরো আন্দোলনে জামায়াত কার্যত একটি ‘ছায়া শক্তি’ হিসেবে কাজ করে। তারা ইসলামী আদর্শভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে, যেখানে সাধারণ মানুষ বিশেষত ধর্মপ্রাণ যুবকরা আস্থা ফিরে পেতে শুরু করে।
পুরোনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না: জামায়াত আমির
বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের নীতিগত অবস্থানে ইসলাম, ন্যায়বিচার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন— এই তিনটি স্লোগান সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দলটি দাবি করছে, তারা আর আগের জামায়াত নয় বরং আদর্শিক, যা গণমানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু, যুদ্ধাপরাধের দায় ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে দলটির অতীত অবস্থান এখনও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার এটাও সত্য যে ২০২৪-২৫ সালের রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে জামায়াত তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। তবে তারা সফল হবে কিনা সেটি নির্ভর করবে সমাজের ওপর। মানুষ জামায়াতের অতীত ভুলে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারবে কিনা, তার ওপর।
কেননা, শনিবার ঐতিসাহিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম সমাবেশে জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘বস্তাপঁচা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি থাকবে না। চাঁদা নেওয়া হবে না, অস্বচ্ছ কোনো লেনদেন চলবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হবে শতভাগ জবাবদিহিমূলক। তারা সেবক হতে চান, মালিক নন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, শাপলা চত্বর কিংবা ২০২৪-এর গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আগের পথে চলতে পারে না। এখন তাদের লড়াই ইনসাফের, নতুন বাংলাদেশ গড়ার।
লেখক: সাংবাদিক