আজ থেকে দশ বছর আগে পাঁচ মে ২০১৫ সনে আমার জীবনের পট পরিবর্তন হয়ে গেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। জীবনের ছন্দ পতন হয়ে গেল।
আমার স্বামী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। অতি বড় শত্রুও উনার নামে কিছু বলতে চাইলে বুক কাঁপবে। তিনি একজন বিচক্ষণ মেধাবী অফিসার হিসেবে দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। কুমিল্লায় যখন প্রথম বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি স্থাপিত হয়, সেই শুভক্ষণে তিনি এ একাডেমির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। আনন্দ নিয়ে মন প্রাণ ঢেলে এই একাডেমিকে দাঁড় করানোর জন্য কাজ করে গিয়েছেন। জেনারেল মান্নাফ, জেনারেল আমজাদ এসব নাম করা জেনারেলদের সঙ্গে থেকে কাজ করার সুযোগ তিনি পেয়েছেন।
পরবর্তীকালে সেনাবাহিনী প্রধান আতিক সাহেব, সেনাবাহিনী প্রধান নূরুদ্দীন সাহেব উনাদের অধীনে সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছেন এবং এর যথাযথ দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয় মেজর জেনারেল হিসেবে কুমিল্লায় জিওসি পদে থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অনেক ধরনের উন্নয়ন সাধন করেছেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত সংস্কৃতমনা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খুব সুন্দর সুরেলা কণ্ঠে বাংলা হিন্দি গজল আধুনিক রবীন্দ্রসংগীত নজরুলসংগীত গাইতে পারতেন। গানের সুর ও করতে পারতেন। এ যেন সেই "মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য্য। "
মুখে সবসময় একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতেন। কথায় কথায় মজার কথা বলে আসর মাতিয়ে তুলতেন। ছোট বড় সব বয়সের মানুষেরা উনার ভক্ত হয়ে যেত। এটা উনার একটা বিশেষ গুণ ছিল। আরেকটি মজার বিষয় হলো ঢাকা কলেজে যারা আমার ছাত্র ছিল ওই সব মেধাবী ছাত্রগুলো পরবর্তীকালে আর্মিতে যোগ দিয়ে অফিসার হয়েছে। এরা কেউ কেউ লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যন্ত হয়েছে। এ আমাদের মস্ত বড় প্রাপ্তি। এখন পর্যন্ত উনার হাতে গড়া অনেক সুযোগ্য অফিসার সেনাবাহিনীর প্রধান হয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। মহান আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করি উনাকে যেন আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল ফেরদাউস স্থান করে দেন। বদর মানে পূর্ণিমার চাঁদ। যেদিন উনি অনন্ত লোকে যাত্রা করলেন সেদিনও ছিল আকাশে বৈশাখীর ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। দোয়া চাই সবার মনে এ চাঁদের মতোই যেন উনি চিরকাল জ্বলজ্বল করে বেঁচে থাকেন এবং মহান আল্লাহ পাক যেন পূর্ণ চন্দ্রের স্নিগ্ধতা দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়ে পূর্ণতা দান করেন। আমিন।
স্মৃতিচারণ: মেজর জেনারেল সৈয়দ বদরুজ্জামানের স্ত্রী
জেএইচ