ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

প্রবীণ উৎসব-জীবনের জয়গান

হাসান আলী  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
প্রবীণ উৎসব-জীবনের জয়গান

প্রবীণের আলাদা কোনো উৎসব নেই। সবার সঙ্গে উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেলে খানিকটা আনন্দ ফুর্তি, হইচই করে নিজেদের চাঙা করতে পারেন।

প্রবীণেরা উৎসবে অংশ নিতে চান। পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে  কাটানো মুহূর্তগুলো প্রাণে শক্তি যোগায়। নিঃসঙ্গ প্রবীণের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক সময় কষ্ট ও ব্যথা বেদনার। বেশিরভাগ প্রবীণ ধর্ম পালনে অধিক মনোযোগী হয়ে নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে চান। পরকালের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

আমাদের প্রতিটি উৎসবই তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে উদযাপিত হয়। উৎসব সাজানোর সময় প্রবীণদের কথা তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। উৎসবে সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ সহজ করা খুবই জরুরি বিষয়। প্রতিবন্ধী মানুষ আনন্দ উৎসবে শামিল হলে উৎসব বৈচিত্র্যপূর্ণ হবে।  

আমাদের দেশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হলো পিকনিক বা বনভোজন। বিশেষ করে শীতের সময় এই আয়োজনটা সবচেয়ে বেশি করা হয়। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দল বেঁধে দর্শনীয় স্থান বা রিসোর্টে সারাদিন মুখরোচক খাবার, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান র‍্যাফেল ড্র ইত্যাদি আয়োজন করে। এসব আয়োজনে প্রবীণের দুর্বল অংশগ্রহণ থাকে কিংবা মোটেও থাকে না। পিকনিকে প্রবীণদের জন্য আলাদা করে কোনো আয়োজন তেমন একটা চোখে পড়ে না।

আয়োজকেরা ভুলে যান যে পিকনিকে প্রবীণেরাও আসেন। কেউ কিছু মনে করতে পারেন, এ ভাবনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রবীণদের মধ্যে আছে। পিকনিকে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে যানবাহনে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা লাগে। দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহনে প্রবীণদের বসে থাকা কষ্টের এবং বিরক্তির।  

গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, পুনর্মিলনীতে আমাদের প্রবীণরা অংশ নিয়ে থাকেন। এসব উৎসবে যেসব আয়োজন থাকে তাতে অংশগ্রহণ করতে টাকা পয়সা খরচ হয়। অনেক সময় ইচ্ছে থাকার পরও আর্থিক সংকটের কারণে  প্রবীণেরা উৎসবে যোগ দিতে আগ্রহী হন না।

সাহিত্য সম্মেলন,কবিতা উৎসব, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, নাটক, সিনেমায় প্রবীণদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রবীণরা প্রভূত আনন্দ লাভ করেন।  

উৎসবে অংশগ্রহণ সহজ স্বাভাবিক আনন্দদায়ক করতে আয়োজকরা সব সময়ই সচেতন থাকেন। এখন সময় এসেছে প্রবীণদের উৎসবে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে তোলার, সব উৎসবকে প্রবীণবান্ধব করে আয়োজন করার, প্রবীণদের জন্য আলাদা অথবা প্রবীণদের মুখ্য ভূমিকায় রেখে প্রবীণ উৎসবের আয়োজন করার।  

খাওয়া-দাওয়া উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে খাবার প্রবীণবান্ধব হওয়া দরকার। খাবার মুখরোচক, সুস্বাদু, নিরাপদ হলে উৎসব জমজমাট হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবীণেরা হাসি-খুশি-আনন্দে থাকলে তাদের অসুখ-বিসুখ তুলনামূলক কম হবে। আমাদের দায়িত্ব হবে প্রবীণদের সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং উৎসবে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করা।  

সামাজিক পরিবর্তনের ফলে যৌথ পরিবার ভেঙে স্বামী-স্ত্রী কেন্দ্রিক একক পরিবারের উৎপত্তি হয়েছিল। সেই একক পরিবারও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নারীরা ব্যাপকভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের কারণে স্বামী-স্ত্রীর কর্মস্থল আলাদা হয়ে গেছে। প্রায় এক কোটি কর্মজীবী মানুষ বিদেশে অবস্থান করায় স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রবীণদের পরিবারে দেখা শোনা, সেবা যত্ন পাওয়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে।  বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হলে উৎসবের বিকল্প নেই। মানুষ সমাজে বাঁচতে চায়, সামাজিক জীবনই কাম্য।
 
অস্তগামী সূর্য ডোবার সময় পশ্চিম আকাশ রঙিন  হয়ে উঠে। সূর্য ডোবার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য হাজার হাজার মানুষ উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করে। তেমনি মানুষের জীবনের শেষের দিনগুলো রঙিন করে সাজিয়ে নিতে হবে, যা দেখে অন্যরা আনন্দ লাভ করবেন। ব্যক্তি নিজেও জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন, আনন্দিত হবেন। জীবনকে উদযাপিত করতে হবে। জীবন শুধু অনুশোচনা, নালিশ, দুঃখ-দুর্দশা-কষ্ট ভোগের জন্য নয়। প্রবীণ জীবনে বেশিরভাগ মানুষ পরিপূর্ণতায় থাকে। স্বাধীন জীবন যাপন করার সুযোগ আসে। দায়-দায়িত্ব তুলনামূলকভাবে কমে আসে।  

প্রত্যেক মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা কমবেশি রয়েছে। সেই দুঃখ কষ্ট প্রবীণ বয়সে বারবার মনে করে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না। দুঃখের কাহিনী বারবার মনে করে ভারাক্রান্ত হয়ে লাভ নেই। দুঃখ-কষ্ট মোকাবিলা করতে হবে আনন্দ লাভ করে। আনন্দ পেতে এবং আনন্দ দিতে ব্যক্তির বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। প্রবীণকেই আনন্দ লাভের জন্য উদ্যোগী হতে হবে।

আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণদের জন্য প্রবীণ উৎসবের আয়োজন করেছি। রেজিস্ট্রেশন করা দেড়শো প্রবীণ ঢাকার ধানমন্ডি সোবহানবাগের গ্রিন গার্ডেন রেস্টুরেন্টে আজ মিলিত হবো। আমরা চাই, গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বিবেচনাসম্পন্ন মানুষেরা প্রবীণবান্ধব নানা উৎসবের আয়োজন করবেন, যাতে করে প্রবীণেরা সহজে এ ধরনের উৎসবে যোগ দিয়ে পরিচিত, জানাশোনা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। প্রবীণ উৎসব হোক জীবনের জয়গান।  

লেখক
হাসান আলী
লেখক, গবেষক ও সংগঠক

বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।