ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ঘরে তারাবী: আল্লাহ তাআলা মুমিনের কোনো আমলকেই বিফল করেন না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
ঘরে তারাবী: আল্লাহ তাআলা মুমিনের কোনো আমলকেই বিফল করেন না

সলাতুত্ তারাবী রমজান মাসের বিশেষ একটি ইবাদত। বাৎসরিক ইবাদত হলেও সলাতুত্ তারাবী মুসলিম সমাজে এটি বহুল পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ধর্মীয় পরিভাষসমূহের অন্যতম।

মাহে রমজানে রাতের বেলায় এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে বিতিরের আগে তারাবীর নমাজ আদায় করতে হয়। তারাবীহ্ আরবি শব্দটি তারবিহাতুন মূল ধাতু থেকে উদ্ভুত।

এর আভিধানিক অর্থ ইস্তিরাহাত বা আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া ঈত্যাদি। যেহেতু বিশ রাকাত তারাবীর নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়, সেজন্য এ নামাজকে তারাবীর নামাজ বলা হয়।

তারাবীর নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ, আদায় না করলে অবশ্যই গুনাহ হবে। তারাবীর নামাজ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশে রমজান মাসের রাতের ক্বিয়াম আদায় করবে অর্থাৎ তারাবীর নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ আল-বোখারী, হাদীস: ১৯০১, সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৭৫৯, সুনানে দারেমী: ১৮১৭, মুসনাদে আহমাদ: ৯৪৪৫, মুসনাদে হুমাইদী: ১০৩৭)

হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের (রা.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের বেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবী) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তার সাথে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোক সংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকট এলেন না।

অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধুমাত্র এই ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের উপর উহা ফরজ করে দেওয়া হয়। (সহীহ আল-বোখারী, হাদীস: ৯২৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৭৬১ , মুআত্তা ইমাম মালেক : খন্ড : ২ , পৃষ্ঠা : ১৫৬ , হাদীস : ৩৭৫) হাদীসের তথ্য মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন দিন মাসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে তারাবীর নামাজ আদায় করেছেন।

অতঃপর রাসুলের যুগে এবং হজরত আবু বকর (রা.) এর খিলাফতকালে এবং হজরত উমার (রা.) এর খিলাফতের প্রথম দিকে মুসলমানগণ একাকি অথবা খন্ড-খন্ড ছোট জামাতে তারাবীর নামাজ আদায় করতেন। অবশেষে হজরত উমার (রা.) হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সাথে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহীহ আল-বোখারী,হাদীস: ২০১০)।

হজরত উমার (রা.) এর খিলাফতকাল থেকে মুসলিম সমাজে জামাতের সাথে তারাবীর নামাজ আদায় করা ইজমায়ে উম্মতের ভিত্তিতে প্রচলিত, সুতরাং ইজমায়ে উম্মতের প্রতি পূর্ণমাত্রায় শ্রদ্ধা রেখে করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জনজীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাড়িতে তারাবীর নামাজ আদয় করাই শরীয়তের বিধান।

অনেকের মনে এই কষ্টটা খুববেশি যে খতম তারাবি পড়তে পারলাম না! আসলে রমজানের বিশেষ আমল বলতে কিয়ামে রমাজান তথা তারাবীর নামাজের বিষয়টি হাদীসে বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। তারাবীর নামাজে পবিত্র কোরআন খতম করতে হবে তেমন কোন বাধ্যবাধকতা উল্লেখ নাই। তবে তারাবীতে পবিত্র কোরআন খতম করলে যে সওয়াব বেশি পাওয়া যায় তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু আজ আমাদের সামনে সবথেকে বড় বিবেচ্য বিষয় হলো বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকা।

আমরা নিজ বাড়িতে তারাবীর নামাজ আদায় করতে বাধ্য হচ্ছি একটা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে। সুতরাং আফসোসের কোনো কারণ নাই। বাড়িতে বাবা, ভাই, ছেলে ও অন্যান্যদের নিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তারাবীর নামাজ আদায় করুন এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে মাহে রমজানে এক খতম পূর্ণ করুন! আর যারা কোরআন তেলওয়াত করতে পারেন না তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ, আপনার যে কয়টা সুরা মুখস্থ আছে সেগুলো বারবার পড়তে থাকুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনের কোনো আমলকেই বিফল করেন না।

লেখক: পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।

বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অপার মহিমার রমজান এর সর্বশেষ