ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ হোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৯
তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ হোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছবি : প্রতীকী

আরাম ও প্রশান্তচিত্তে ধীরে-সুস্থে যে নামাজ আদায় করা হয় সেটাই মুলত তারাবি। আরবি  ‘তারবিহাতুন’-এর বহুবচন ‘তারাবি’। তারবিহাতুন শব্দের অর্থই হলো আরাম করা, বিশ্রাম করা। ইসলামী শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী এই নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর চার রাকাত পরিমাণ বসে আরাম করার বিধান রয়েছে। তাই এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়।

তারাবির নামাজ রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

২০ রাকাত তারাবির নামাজ শরিয়তের দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত। তারাবির নামাজকে আট রাকাতে সীমাবদ্ধ করা অনুচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন দিন এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছেন। নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করা হলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই তিনি পুরো রমজান জামাতের সঙ্গে তা আদায় করেননি।

ওমর (রা.)-এর যুগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে। সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়। তখন আর এটি ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কেননা মহানবী (সা.)-এর ওফাতের মাধ্যমে ওহির পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাবেঈ ইবনে আবি জুবাব (রহ.) বলেন, ‘ওমর (রা.)-এর যুগে রমজানের তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। ’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৭৩৩)
হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। এখানে ২৩ রাকাতের উদ্দেশ্য হলো, ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর।

তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : হাদিস : ৭৭৬৬)

পৃথিবীর প্রথম সহিহ হাদিসগ্রন্থ ‘মুয়াত্তা মালিক’সহ অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকাত তারাবি পড়তেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৩৮০, আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪৯)

এ ধরনের বহু সহিহ বর্ণনার আলোকে ও সাহাবি-তাবেয়িনের যুগ থেকে চলে আসা অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে মসজিদ-ই-নববীতে ২০ রাকাত তারাবি হতো। এখনো মক্কা-মদিনায় ২০ রাকাত তারাবি হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই সুন্নাত নামাজে স্বঃতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বলা যায়, এটি সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭, তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৬৯২, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস : ৪২, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫)

যারা বর্তমানে আট রাকাত তারাবির প্রচার করছেন, তাদের দলিল হলো বুখারি শরিফের একটি হাদিস। বর্ণিত হয়েছে, আবু সালামা (রহ.) আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাস করেন, ‘রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ কী ধরনের হতো?’ আয়েশা (রা.) জবাবে বলেন, ‘রমজানে ও রমজানের বাইরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞাসা কোরো না। এরপর চার রাকাত পড়তেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞাসা কোরো না। এরপর তিন রাকাত পড়তেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯)

আসলে হাদিসটি তারাবি সম্পর্কে নয়। বরং এটি তাহাজ্জুদসংক্রান্ত একটি হাদিস। কেননা এখানে মহানবী (সা.)-এর রমজান ও রমজানেই বাইরের রাতের ইবাদত সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) রমজানে ও রমজানের বাইরে প্রতি রাতে আট রাকাত তাহাজ্জুদ ও তিন রাকাত বিতরের নামাজ পড়তেন।

রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অপার মহিমার রমজান এর সর্বশেষ