তারাবির নামাজ রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
ওমর (রা.)-এর যুগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে। সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়। তখন আর এটি ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কেননা মহানবী (সা.)-এর ওফাতের মাধ্যমে ওহির পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাবেঈ ইবনে আবি জুবাব (রহ.) বলেন, ‘ওমর (রা.)-এর যুগে রমজানের তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। ’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৭৩৩)
হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। এখানে ২৩ রাকাতের উদ্দেশ্য হলো, ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর।
তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : হাদিস : ৭৭৬৬)
পৃথিবীর প্রথম সহিহ হাদিসগ্রন্থ ‘মুয়াত্তা মালিক’সহ অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকাত তারাবি পড়তেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৩৮০, আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪৯)
এ ধরনের বহু সহিহ বর্ণনার আলোকে ও সাহাবি-তাবেয়িনের যুগ থেকে চলে আসা অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে মসজিদ-ই-নববীতে ২০ রাকাত তারাবি হতো। এখনো মক্কা-মদিনায় ২০ রাকাত তারাবি হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই সুন্নাত নামাজে স্বঃতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বলা যায়, এটি সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭, তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৬৯২, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস : ৪২, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫)
যারা বর্তমানে আট রাকাত তারাবির প্রচার করছেন, তাদের দলিল হলো বুখারি শরিফের একটি হাদিস। বর্ণিত হয়েছে, আবু সালামা (রহ.) আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাস করেন, ‘রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ কী ধরনের হতো?’ আয়েশা (রা.) জবাবে বলেন, ‘রমজানে ও রমজানের বাইরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞাসা কোরো না। এরপর চার রাকাত পড়তেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞাসা কোরো না। এরপর তিন রাকাত পড়তেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯)
আসলে হাদিসটি তারাবি সম্পর্কে নয়। বরং এটি তাহাজ্জুদসংক্রান্ত একটি হাদিস। কেননা এখানে মহানবী (সা.)-এর রমজান ও রমজানেই বাইরের রাতের ইবাদত সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) রমজানে ও রমজানের বাইরে প্রতি রাতে আট রাকাত তাহাজ্জুদ ও তিন রাকাত বিতরের নামাজ পড়তেন।
রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এমএমইউ