মেক্সিকোর চিয়াপাস রাজ্যের পার্বত্যাঞ্চলের ল্যাকাঞ্জা সানসেয়াব নামক মায়া গ্রামটির অবস্থান গুয়াতেমালার দক্ষিণ সীমান্তের কাছাকাছি। উসুমাকিন্তা নদী ও এর উপনদী বয়ে গেছে গ্রামটির মেক্সিক্যান পাশ বরাবর।
মেক্সিকোর স্থানীয় আদিবাসী জাতিগুলোর অধিকাংশ বিচ্ছিন্ন ও সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল। মায়ারাও ১৯৪৩ সালের দিকে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল। তবে আজ তাদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
![আধুনিক মায়া গ্রামের ছবি (সংগৃহীত)](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Jharna120170105094823.jpg)
৫০০ বছর ধরে ওই জঙ্গলে বসবাস ল্যাকানডন মায়াদের। চিয়াপাসের সাধারণ ভূমি দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে মেক্সিকো সরকার ৬ লাখ ১৪ হাজার একর জমি তাদের জন্য বরাদ্দ করায় সেটি এখনও শুধুই মায়া গ্রাম।
মায়া জঙ্গলে ভেষজ উদ্ভিদ ও নিজেদের ভাষায় ‘পবিত্র গাছ’ রয়েছে প্রচুর। শক্তিশালী জলপ্রপাত থাকায় গ্রামে যাতায়াতের মাধ্যম ভেলা। গাছ ও পাথরের কাঠামো আবৃত রঙ্গিন জলাভূমির পাশে আঙ্গুরের বাগানও রয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ধর্মপ্রচারকদের আগমন শুরুর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্নই ছিল ল্যাকানডন মায়ারা। তখন পর্যন্ত গাছ কেটেই জীবিকা নির্বাহ করতেন।
![আধুনিক মায়া গ্রামের ছবি (সংগৃহীত)](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Jharna220170105094910.jpg)
১৯৩০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ধর্মপ্রচারকরা সেখানে পৌঁছানোর পর থেকে তাদের বিষয়ে জানা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে মার্কিন ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি দল এসে ল্যাকাঞ্জা সানসেয়াবে একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি করেন। এখন সেখানে আছে অনেকগুলো গির্জাও।
আগের সীমাবদ্ধ যোগাযোগের বিপরীতে আজ তাই গ্রামটির একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্টে কম্পিউটার-ইন্টারনেট-ফেসবুক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা তো আছেই।
এসব প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার কারণে ল্যাকাঞ্জা এখন ‘আধুনিক মায়া গ্রাম’ বলেও পরিচিত।
তবে সবার পরনে সাদা জামা ও দীর্ঘ কালো চুল নিজস্ব ল্যাকানডন ভাষায় কথা বলা ল্যাকানডন মায়াদের বৈশিষ্ট্য। আবেগপূর্ণ এ একই অবয়ব তাদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদ। পাশাপাশি হ্যাক উইনিক বা সত্য মানুষ হিসাবে নিজেদের উল্লেখ করেও এ পোশাক পরেন তারা।
![আধুনিক মায়া গ্রামের ছবি (সংগৃহীত)](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Jharna320170105094951.jpg)
গ্রামটির বাসিন্দা ড্যানিয়েল চ্যানকিন জানান, ৫০০ বছর আগে ল্যাকানডন জাতির দু’টি দল স্পেনীয়দের রূপান্তর ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওই জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে যায়। পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে জঙ্গলে বাস করছে তারা।
তবে বিশাল বন উজাড়ের পর গরু দিয়ে চাষাবাদেও ঝুঁকছেন মায়ারা। অনেক ল্যাকানডন পর্যটনের ওপরও নির্ভরশীল। ভ্রমণকারীদের জন্য ভবন ও কেবিন তৈরি করে ভাড়া দেওয়া ছাড়াও ভেলায় ভ্রমণ করানো এবং গাইডের দায়িত্ব পালনও করেন অনেকে।
গ্রামের নিজ দোকানে কোকাকোলা বিক্রি করেন ড্যানিয়েল। তার গাড়িও পর্যটকদের কাজে লাগিয়ে অর্থ আয় করেন।
বনের ঔষধি গাছ ও গাছপালা সম্পর্কে ড্যানিয়েল জানান, বিষাক্ত চেকহেম গাছে ত্বক পোড়া রোগ হতে পারে। এর প্রতিষেধকও গাছের ১০০ মিটারের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে যেটি একটি রজন গাছ। এ গাছ প্রসবের ক্ষতের আরোগ্যেও ব্যবহৃত হয়।
![আধুনিক মায়া গ্রামের ছবি (সংগৃহীত)](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Jharna420170105095024.jpg)
এতোসব পরিবর্তন-উন্নয়নের পরও মায়া সভ্যতার প্রাচীন একটি রহস্যময় অনুভূতি হয় ল্যাকাঞ্জার গভীর জঙ্গলে গেলে। মায়া লেখা দিয়ে গড়া পাথরের বৃহৎ ব্লক সাইটেও খুঁজে পাওয়া যাবে হারিয়ে যাওয়া মায়া শহরকে। আরও আছে শক্তিশালী খিলানপথের একটি ঘনত্বপূর্ণ নির্মাণ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত কয়েকটি অট্টালিকা-ভবন, যা মায়ার অকপটতাকেই প্রকাশ করে।
এসব অতীত নিদর্শন এবং প্রাগৈতিহাসিক মায়া সভ্যতা ল্যাকানডন জাতির গর্বের প্রতীক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এএসআর