ঢাকা, বুধবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

মানুষের নতুন প্রজাতির খোঁজে...

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
মানুষের নতুন প্রজাতির খোঁজে... মানুষের নতুন প্রজাতির খোঁজে/ ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৬ সালে থেকে গত চার দশক ধরে মানুষের একটি নতুন প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষের অনুসন্ধানে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। চীনের জুজিয়াও এর একটি গুহায় সে বছর প্রাচীন মানুষের কিছু খুলির টুকরা এবং চার ব্যক্তির নয়টি দাঁত আবিষ্কৃত হয়েছিল।

১৯৭৬ সালে থেকে গত চার দশক ধরে মানুষের একটি নতুন প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষের অনুসন্ধানে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। চীনের জুজিয়াও এর একটি গুহায় সে বছর প্রাচীন মানুষের কিছু খুলির টুকরা এবং চার ব্যক্তির নয়টি দাঁত আবিষ্কৃত হয়েছিল।

৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগে বসবাস ছিল দাঁতগুলোর মালিক মানব প্রজাতিটির। কিন্তু গবেষণায় ওই প্রজাতির জীবাশ্ম আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে মেলেনি। এমনকি ওই সময়কার নিয়ান্ডারথাল, ডেনিসোভান, এবং হবিট নামে পরিচিত রহস্যময় শঙ্কর প্রজাতি হোমো ফ্লোরোসিয়েনসিস্‌দের সঙ্গে সাদৃশ্যও নেই তাদের।
 
জানা প্রজাতিগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন না হওয়ায় তাদেরকে একটি স্বতন্ত্র ও প্রজাতির মানুষ বলে বর্ণনা করে তার অনুসন্ধানে গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
 
স্পেনের বার্গোস মানব বিবর্তন ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের মারিয়া মারটিনন টরেস সাবধানী উচ্চারণে তাই বলেন,  ‘তারা আসলে একটি বিদ্যমান প্রজাতিরসদস্যও হতে পারে। এমনকি তারা এমনকি আমাদের বা নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ইন্টারব্রিড হয়ে জন্ম নেওয়া ডেনিসোভান প্রজাতিরও হতে পারে’।
 
ডেনিসোভানদের সঙ্গে তাদের কষ্ট সহকারে সহাবস্থানের সূত্র ধরে মারটিনন টরেস নতুন প্রজাতিটিকে এভাবে পরিচিত করতে চাইলেও এর সপক্ষে খুব বেশি প্রমাণ নেই তার হাতে। মানুষের নতুন প্রজাতির খোঁজে/ছবি: সংগৃহীত
 
সাইবেরিয়ার একটি গুহা থেকে পাওয়া দুই দাঁত ও একটি ছোট আঙুলের হাড়ে গঠিত ডেনিসোভানদের জীবাশ্মের সঙ্গে প্রজাতিটির তুলনামূলক গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। করেছেন প্রায় সব পরিচিত হোমিনিন প্রজাতির প্রতিনিধিত্বমূলক ৫ হাজারেরও বেশি দাঁতের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণও।
 
কিন্তু এসব ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অজানা মানুষেরা নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের চেয়ে স্বতন্ত্র ছিল। তবে উভয় প্রজাতির কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের মাঝে বিদ্যমান।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যারেন কারনোই বলেন, ‘আমার মনের মধ্যে সামান্য সন্দেহ নেই যে, এই দাঁতের দাঁতের ওপর পৃষ্ঠেরকিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে, যা একটি নতুন প্রজাতির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বোধগম্যভাবে দেহাবশেষটি আধুনিক মানুষ ও ডেনিসোভানদের একটি শংকর থেকে আসা, কিন্তু পুরোপুরি বিশুদ্ধ প্রক্রিয়ায় নয়’।

কারনোই চীনের রেড ডিয়ার গুহা থেকে এর আগে পাওয়া রহস্যময় হোমিনিনদের জীবাশ্মের সঙ্গেও জুজিয়াও হোমিনিনদের মেলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও নতুন এইপ্রজাতিটি আগেরটির তুলনায় আরো সাম্প্রতিককালে বসবাস করতো চীনে।

যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথু স্কিনার ও লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের ফ্রেড স্পুর বলেন, এটি এশিয়া থেকে পাওয়া বিক্ষিপ্ত জীবাশ্মের নমুনা। তাই প্রজাতিটির অবস্থা অনুমান করা কঠিন। দেহাবশেষটি আধুনিক ও আদিম বৈশিষ্ট্যের একটি মিশ্রণ বলেও মত দেন তারা। মানুষের নতুন প্রজাতির খোঁজে/ছবি: সংগৃহীত

ওয়াশিংটনের মিসৌরির সেন্ট লুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিক ট্রিঙ্কাস বলে, পৃথক হোমো প্রজাতির অনেকগুলোর একটি একক প্রজাতির রূপ হতে পারে এটি। কারণ, তাদের দাঁতের জীবাশ্ম রেকর্ড বলছে, সেগুলো পরিচিত প্রজাতিগুলোর সঙ্গে মাপসই নয়, তবে মিশ্রণের একটি বিস্ময়কর আকার রয়েছে।

সকল বিজ্ঞানীরাই আশা করছেন, আরো কিছু হাড় পাওয়া গেলে এ প্রজাতিটির পরিচিতি খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। আর তারা খুব শিগগিরই তা আবিষ্কার করবেন। এশিয়ার জীবাশ্ম সমৃদ্ধ অংশগুলোতে এ অনুসন্ধানও চলছে।
 
জার্মানির লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের মাটিয়াস মেয়ার বলেন, ‘পূর্ব এশিয়া থেকে আরো তথ্য পেলে তা কাজে লাগবে। কিন্তু স্পষ্টত এ কঠিন গবেষণায় শুধুমাত্র ডিএনএ নির্ধারক উত্তর পেতে হবে’।

মারটিনন টরেস বলেন, ‘এশিয়ার বিচ্ছিন্ন মানব প্রজাতিটি আমাদের ধারণা দেয় যে, এটি বিবেচনা করা বিস্ময়কর হবে না যে, তাদের সময়ে এ মহাদেশেএকাধিক প্রাগৈতিহাসিক মানব প্রজাতি ছিল। এসব জনগোষ্ঠীর কিছু কিছু এমনকি আধুনিক ইউরোপীয়দের পূর্বপুরুষও হতে পারে’।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বাধিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদেরও শৈশবাস্থল ছিল। তাই এ ধারণা বিতর্কিত।
 
কিন্তু মারটিনন টরেস মনে করেন, আরো আরো এশীয় জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করাই এ রহস্য উদ্‌ঘাটনের উপায়। কারনোই এ ধারণার সঙ্গে একমত, ‘খুব দীর্ঘ সময় আগে থেকেই আমরা এ পর্যন্ত পূর্ব এশিয়াকে অবহেলা করেছি। এখন সেখানে করা নতুন গবেষণায় আমরা নতুন কিছু চমকও পেতে শুরু করেছি, যা ইউরোপ-আফ্রিকা থেকে পাওয়া জীবাশ্মের ওপর ভিত্তি করে প্রচলিত জ্ঞানের সঙ্গে মিলছে না’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।