ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অফবিট

‘ইবলিশ চত্বরে’ কিছুক্ষণ

মহিউদ্দিন মাহমুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
‘ইবলিশ চত্বরে’ কিছুক্ষণ ইবলিশ চত্বর। ছবি: বাংলানিউজ, মঈন উদ্দিন

রাজশাহী থেকে ফিরে: কয়েকজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে গেলাম ‘ইবলিশ চত্বরে’। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডাও হলো সেখানে।

কিন্তু ইবলিশ বা শয়তানের দেখা পেলাম না।

গাড়ি থেকে নেমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্যারিস রোডে বেশ কিছু ছবি তুললাম সবাই। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আসিফ ভাই আমাদের ‘ইবলিশ চত্বরে’ নিয়ে গেলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হতাশ চত্বর, প্রেম বঞ্চিত চত্বর, প্রেম চত্বর, অস্থিরপুর চত্বর, বিসিএস চত্বর, ভকেট চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, রোকেয়া চত্বর, নগররাষ্ট্র চত্বর, মিডিয়া চত্বর, ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজ কর্নার চত্বর, ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা চত্বরসহ মজার মজার নামে অনেকগুলো চত্বর আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় চত্বরগুলোর একটি এ ‘ইবলিশ চত্বর’।

নাম ইবলিশ চত্বর হলেও এটি কোন শয়তানের আস্তানা নয়। সবুজে ঘেরা এটি একটি মাঠ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সোজা উত্তরে ছোট একটি আমের বাগান। তার ওপাশে বিশাল মাঠ। আর এ মাঠকেই বলা হয় ইবলিশ চত্বর। চত্বরের দক্ষিণে একটি বিশাল শানবাঁধানো পুকুর এবং উত্তরে মেহগনি গাছের সারির পাশেই ছাত্রীদের মুন্নজান হল। আর পূর্ব দিকে রয়েছে ড. মমতাজ উদ্দীন আহমেদ একাডেমিক ভবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাপ্রিয় শিক্ষার্থীদের অন্যতম জায়গা এ ইবলিশ চত্বর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিক, নাচ-গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে থাকে এখানে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও সকাল-বিকেল মাঠে চলে ব্যাট-বলের লড়াই।

এছাড়া পুকুরের চারপাশে বসার জন্য বানানো হয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ। সন্ধ্যা হওয়ার পরই এখানকার ল্যাম্পপোস্টে জ্বলে ওঠে সাদা, হলুদ রঙের বাতি।

রাবির এ ইবলিশ চত্ত্বরের নাম নিয়ে অনেক ধরনের কথা শোনা যায়। তবে এ নামকরণের আসল ইতিহাসটা একটু ভিন্ন। বিখ্যাত নাট্যকার মামুনুর রশীদের রচনা এবং পরিচালনায় ১৯৮১ সালে ইবলিশ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মাঠে 'ইবলিশ' নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। সেই থেকে এ চত্ত্বরের নামকরণ করা হয় 'ইবলিশ চত্ত্বর'।

১৯৯৮ সালে ফোকলোর বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে কৃষ্ণচূড়া এবং রাধাচূড়া গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চত্বরের নাম রাখা হয় ফোকলোর চত্বর। মূলত ইবলিশ নামটিকে বিলুপ্ত করার জন্য একই চত্বরে ফোকলোর আড্ডা কমিটি এ কাজটি করে। পরে ২০০৩ সালে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেন। কিন্তু সবাই ইবলিশ চত্বর হিসেবেই চেনে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান বলেন, এ চত্বরটি আড্ডার জন্য বিখ্যাত। এখনও এখানে আসলে স্মৃতিকাতর হই, মধুর স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রনি আহমেদ বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এটি একটি দারুণ জায়গা। ঘাসের ওপর বসে বিকেলের সূর্য ডোবার সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে গোল হয়ে বসে আড্ডা কিংবা গ্রুপ স্টাডির জন্য সুন্দর পরিবেশ এটি।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব হোসেন বলেন, বিকেলে খেলাধুলা করা, খেলাধুলা শেষে পুকুরের পাশে বেঞ্চে বসে আড্ডায় দেওয়া। সব মিলিয়ে আড্ডার জন্য প্রাণবন্ত একটি স্থান এ চত্বর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এমইউএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।