ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

টেকসই উন্নয়নের অর্থ নারীর ক্ষমতায়ন

মাহমুদ মেনন ও শিহাবউদ্দীন কিসলু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
টেকসই উন্নয়নের অর্থ নারীর ক্ষমতায়ন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাতিসংঘ সাধারণ ‍অধিবেশন থেকে: টেকসই উন্নয়নের অর্থ নারীর ক্ষমতায়ন এবং জীবনের সকলক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান অংশগ্রহণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।



তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের অর্থ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জীবনের সকলক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান অংশগ্রহণ। উৎপাদনমুখী সম্পদে নারীর প্রবেশাধিকার এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারের সময়োচিত নীতি গ্রহণের ফলে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নারী নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে।

ছেলেমেয়েরা যাতে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতা এবং সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেদিকে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে বিশ্ব নেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বিশ্বনেতাদের জানান, বাংলাদেশ সম্ভবতঃ বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সংসদের স্পিকার একজন নারী, বিরোধী দলের নেতা এবং সংসদ উপনেতাও নারী। বিচার, প্রশাসন, জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ পদ নারীর জন্য সংরক্ষিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬০ শতাংশ পদ নারীর জন্য সংরক্ষিত।

শিক্ষাক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং প্রাথামিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও কন্যা শিশুর ভর্তির অনুপাতে সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। দরিদ্র পরিবারের প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ এবং মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ। মোট ছাত্রীর ৬০ শতাংশ উপবৃত্তির আওতায় এসেছে। প্রতিবছর মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩১ কোটি ৭৮ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তার মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমার সরকার অনেকগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। জনসংখ্যার ২৪ শতাংশের অধিক মানুষ এসব কর্মসূচির আওতায় এসেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ভিজিডি, ভিজিএফ, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় প্রকল্প, এবং বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা, দুস্থ মহিলা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ভাতা, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভাতা এবং একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা বিধান।

তিনি জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং তাদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সুদবিহীন ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকুরিতে এক শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাসে এমডিজি হচ্ছে সবচেয়ে সফল বৈশ্বিক দারিদ্র্য-বিরোধী কর্মসূচি। এই এমডিজির কারণেই বিশ্বের ১৯৯০ সালের তুলনায় দারিদ্র্যের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অধিকসংখ্যক কন্যা শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে; কমসংখ্যক শিশু অকালে মৃত্যুবরণ করছে এবং অধিকসংখ্যক মানুষ নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করছেন।

তবে এ অগ্রগতি বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও সমানভাবে সম্পন্ন হয়নি। যদিও সমষ্ঠিগতভাবে এমডিজির আওতায় দারিদ্র্য বিমোচনের গড় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, তথাপি বিশ্বের প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষ এখনও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে বাংলাদেশ একটি নতুন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। কাজেই ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ নতুন কাঠামোয় টেকসই উন্নয়নের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। যেখানে বাংলাদেশের মত দেশগুলোর বিভিন্নমুখী প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা থাকবে।

জাতিসংঘের Open Ended Working Group কঠোর পরিশ্রম এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সুপারিশ কর‍ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আমরা এ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট রয়েছি। আমরা মনে করি, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো হবে সযত্নে নির্বাচিত ভারসাম্যমূলক একটি প্যাকেজ। ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার জন্য যা হবে একটি অপরিহার্য ভিত্তি। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এজেন্ডায় স্বল্পআয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্পদ এবং সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানের উপায় সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, এই নতুন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সমতাভিত্তিক, সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই বিশ্ব গড়ার প্রত্যাশা পূরণের উপায় থাকতে হবে। যেখানে কোনো ব্যক্তি বা দেশ বাদ পড়বে না। এ উন্নয়ন এজেন্ডাকে জাতীয় নীতির উর্ধ্বে উঠে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বহুমুখীনতা সৃষ্টিতে অবশ্যই অবদান রাখতে হবে।

‘২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডার সাফল্য নির্ভর করবে সম্পদের পর্যাপ্ত সরবরাহের উপর। এক্ষেত্রে সাধারণ অথচ ভিন্নভিন্ন দায়দায়িত্ব নীতির ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। ’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

আগামী বছরের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও নিজের বক্তব্যে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ