ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সারা জীবনের আয় ভাইকে দিয়ে পথে পথে ঘুরছেন কবিতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
সারা জীবনের আয় ভাইকে দিয়ে পথে পথে ঘুরছেন কবিতা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে আপন ভাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছেন কবিতা সরকার নামে এক নারী। সুবিচার পাওয়ার আশায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

তাতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ভাইয়ের নামে আদালতে মামলাও করেছেন। কিন্তু ভাইকে দেওয়া টাকা ও চুক্তি অনুযায়ী জমি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না অসহায় এই নারী। এ অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে সর্বশেষ সোমবার (৭ নভেম্বর) চিতলমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেন। দুই দিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক বড়াল তার অনশন ভাঙান। কিন্তু কবিতার দাবি পূরণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন। এ অবস্থায় এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইকে দেওয়া ২০ লাখ টাকা অথবা এই টাকার জমি না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন কবিতা সরকার।

৪০ বছরে কবিতা সরকার চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী গ্রামের মৃত ভরত সরকারের মেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন।

কবিতা সরকার বলেন, বাবার সংসারে অভাব থাকায় আমি গার্মেন্টসে চলে যাই। বিয়েও করিনি জীবনে। ২০০২ সালের দিকে আমার ছোট ভাই সুব্রত সরকার মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বেশকিছু টাকা দেনা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। কিছুদিন পর ভারত থেকে এসে বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার জেলে যায় সুব্রত। জেলে যাওয়ার পর মামলা পরিচালনা ও বিভিন্ন কারণে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ১ একর ৪৫ শতক জমি বিক্রির শর্তে আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে সে। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সুব্রত আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন চুক্তি ভঙ্গ করে সেই জমি থেকে প্রায় এক একর বিক্রি করে দিয়েছে। অবশিষ্ট জমি বিক্রির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমি জমি বিক্রি করতে নিষেধ করলে এবং পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় কয়েকবার মারধরও করেছে।

তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই সুব্রত সরকার একজন মাদক সেবী। সে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মায়ায় পড়ে ও নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে ওকে বাঁচাতে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাকে মেরে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমি যে কোন মূল্যে আমার টাকা অথবা জমি চাই। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি টাকা বা চুক্তিকৃত জমি না পাই, তাহলে আত্মহত্যা করব। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী।

কবিতার বড় বোন সাবেক ইউপি সদস্য অঞ্জলী ঢালী বলেন, সুব্রতকে কারাগার থেকে ছাড়ানো, বিভিন্ন লোকের দেনা পরিশোধও  সংসার দেখভালসহ নানা কারণে কবিতা টাকা দিয়েছে। ২০ বছরে কবিতার কাছ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়েছে সুব্রত। কিন্তু এই টাকা ফেরত দেওয়ার নাম নেই। বরং আমরা ভাই-বোনরা টাকা ফেরত দিতে বললে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করে। এমনকি কবিতাকে কয়েকবার মারধরও করেছে। আমার বাপমরা বোন এখন কোথায় যাবে, কী করবে- এই ভেবে আমার খুব কষ্ট হয়।

ভাই বিকাশ সরকার বলেন, নিজের জন্য কিছু না করে সুব্রতকে বাঁচাতে জীবনের সবকিছু দিয়েছে কবিতা। সুব্রত বিভিন্ন অসুবিধায় পড়ে কবিতার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি নিয়েছেন এটা সবাই জানে। কিন্তু সুব্রত এখন সব টাকার কথা অস্বীকার করছেন। এমনকি কবিতার পক্ষে কথা বলায় আমাকেও মারধর করতে এসেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত সুব্রত সরকার বলেন, বিভিন্ন সময় বোন কবিতা আমাকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। বিক্রি করার পর আমার এখন ৯ শতক জমি রয়েছে। আমি সেই জমি দলিল করে দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু আমার বোন রাজি হয়নি।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, ‘কবিতা সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার অফিসে একাধিকবার বসা হয়েছে। সুব্রতর কাছে কবিতা টাকা পাবে বিষয়টা প্রমাণিত।

চিতলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, কবিতা একজন অসহায় নারী। তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি আমরা। কবিতার অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় সালিস-মীমাংসা করা হয়েছে, কিন্তু সুব্রত কারও কথা মানেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।