ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘চাকরিজীবনে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
‘চাকরিজীবনে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি’

ঢাকা: দীর্ঘ ৩৩ বছর বাংলাদেশ পুলিশে চাকরির পর বিদায় নিচ্ছেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। বিদায়ের আগে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ চাকরি জীবন- পুরোটাই ইবাদত মেনে চলেছেন তিনি। নেননি কোনো অন্যায় সুবিধা।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২ উপলক্ষে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার। সেখানে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্দেশ্য করে তিনি এ কথা বলেন।

মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো চাকরি জীবনে আপনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) যে আশীর্বাদ মাথার উপরে ছিল তা কখনোই ভুলবো না। চাকরিটাকে ইবাদত মনে করেছি, কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ভালোভাবে চলতে আপনি পেছন থেকে যে সাপোর্ট দিয়েছেন, সেজন্য আপনাকে আলাদাভাবে স্যালুট ও শ্রদ্ধা।

পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আইজিপি হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছেন, তিনি ভালো করবেন। এ আস্থা আমার রয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষণ আশা আছে; ততক্ষণ পুলিশ বাহিনী লড়াই করবে।

এর আগে কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ে কমিশনার বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হওয়ার ৫-৬ মাস যেতেই করোনা এসেছে। সে সময় বিধি-নিষেধের কারণে স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য আমি খুব বেশি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য কাজ করতে পারিনি। তারপরেও আমি চেষ্টা করে গেছি এলাকার মানুষ নিয়ে কাজ করার জন্য। বিশেষ করে ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগে এসব সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আলাদা আইন ছিল না। পর্যায়ক্রমে যখন অপরাধ বাড়তে থাকলো, আইন হলো। পর্যায়ক্রমে আইন কঠোর থেকে কঠোরতর হলো। কিন্তু শুধু আইন করে কি অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয়েছে? হয়তো কমেছে, কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। এসব সামাজিক সমস্যা যদি সবাই মিলে প্রতিরোধ করি তাহলেই এ অপরাধ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

বিদায়ী এ কমিশনার বলেন, প্রত্যেক মাদকসেবী টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়ায়। একসময় মাদক ব্যবসায় জড়ায়। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরলে শত শত ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। আজকে যে মাদক খায় সেই ভবিষ্যতের ব্যবসায়ী হবে। সামাজিকভাবে সবাই মিলে যদি এটা প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে শুধু জেল দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। আমরা সমাজে বাস করি, আমরাই নির্ধারণ করবো আমাদের সমাজ কেমন হবে। সবাই হাত মেলালে সমাজের গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথম পুলিশ সপ্তাহ পালন করতে এসে কমিউনিটি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। কমিউনিটি পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষ সেই সময় থেকেই নিরাপদে থাকতে পেরেছে। আপনাদের কর্মকাণ্ড, আপনাদের প্রচেষ্টা সেটিকে ঘিরেই পরিচালিত হোক। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এবং এই জনগণকে কেন্দ্র করেই কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম এগিয়ে যাবে এমনটাই আশা করেন তিনি।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যাপারটি ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যাপারটি তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে করে তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে।

এছাড়াও মূল ধারার পুলিশিংয়ের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশের সেতুবন্ধন তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।