ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

লক্ষ্মীপুরে কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
লক্ষ্মীপুরে কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকায় কয়েকশ’ কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছ উপড়ে, ডালপালা ভেঙে পড়ে জেলার রামগতি এবং কমলনগর উপজেলা মেঘনা নদী সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ঝড়ো বাতাস এবং টানা বৃষ্টিতে আমন ধান এবং শীতকালীন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  

সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলার সদর ভবানীগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন ক্ষেতে টমেটো, মরিচ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। কোনো কোনো স্থানে গবাদি পশু নিখোঁজ রয়েছে।  

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, পুরো জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয়ের জন্য তারা কাজ করছেন। তবে ঝড়ে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ৭-৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেকগুলো বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং লাইন বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত জেলাব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে দুপুরের দিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আওতাধীন পৌরসভার আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। আর পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন সদর উপজেলার মাত্র একটি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে।  

লক্ষ্মীপুর পল্লী সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের ৩৬৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে এবং ৪৫০টি ক্যাবল ছিঁড়ে গেছে। ফলে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কখন নাগাদ সচল হবে, তা ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে তাদের কর্মীরা কাজ করচ্ছেন। লাইন মেরামত হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।  

তিনি জানান, লাইন বিধ্বস্ত হওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় জেলাজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ঝড়ে বিভিন্ন স্থানের ইন্টারনেট ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে সেবা বন্ধ রয়েছে। ঝড়ে নষ্ট হয়েছে গ্রামীণ কাঁচা সড়কও।  

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাতেমা বাংলানিউজকে বেগম বলেন, গতকাল সোমবার রাতে ঝড়ো বাতাসে একটি গাছ উপড়ে আমাদের নতুন ঘরের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েচে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ঘরটি নির্মাণ করেছি।  

ফাতেমার স্বামী রিকশাচালক নুরনবী বলেন, ঝড়ের কারণে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু শেষ হয়ে গেছে।  

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে অন্তত ১০টি কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সবগুলো ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। পুরো এলাকার অর্ধেকের বেশি ফসল হেলে পড়ে, পানিতে তুলিয়ে নষ্ট হয়েছে। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে কমলনগরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী নাছিরগঞ্জ বাজারের একটি মসজিদসহ অনেকের বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে।  

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউছুপ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নে শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে।  



একই উপজেলার চরকালকিনির চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ২০০ মতো ঘর ভেঙে গেছে। ঝড়ে হাজার হাজার গাছ উপড়ে গেছে।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের সবগুলো সবজি ক্ষেতের সবজি পানিতে ডুবে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেতে সবজি গাছ মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে।  

চরমনসা গ্রামের কৃষক মো. জাহের জানান, তার তিন একর জমির টমেটো গাছ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ে আমন ফসল ও সবজির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।  

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ে উপজেলার ৪৪টি ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ৩১১টি ঘর আংশিক ভেঙেছে। ২৪০টি মহিষ এবং ৮টি গরু নিখোঁজ আছে। এছাড়া ১৬৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।