ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শুক্রবার থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরলে হতে পারে ২ বছরের জেল 

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২২
শুক্রবার থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরলে হতে পারে ২ বছরের জেল 

চাঁদপুর: সাগর থেকে মিঠা পানিতে আসা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টা থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।  

এ সময়ে মাছ আহরণ, বেচা-কেনা, মজুদ ও পরিবহন বন্ধ থাকবে।

মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলার উপকূলীয় এলাকার ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলের জন্য খাদ্য সহায়তা (বিজিএফ) হিসেবে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এ বছর ২০ কেজির স্থলে প্রত্যেক জেলে ২৫ কেজি করে চাল পাবেন।  

সরকারের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা ও মেঘনা নদীর প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। চাঁদপুর অংশে দিন ও রাতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ ইলিশ প্রজনন রক্ষায় যৌথ এবং পৃথক অভিযান পরিচালনা করবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে মো. মাছুদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা আমরা মানবো। কিন্তু আমাদের যে সহযোগিতা করা হয়, তাতে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।

একই এলাকার জেলে মো. শাহাদাত ও মজিবুর বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানের সময় আমাদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেয়। কিন্তু ওজনে সঠিক পাই না। ২০ কেজির স্থলে পাওয়া যায় ১২-১৫ কেজি। যে কারণে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ২২ দিন আমাদের সংসার চালানোর মতো কোনো উপায় থাকে না। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।

হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে নেয়ামত হাওলাদার বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা বেকার হয়ে পড়ি। সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। বিকল্প হিসেবে আমাদের এখন কৃষি কাজ কিংবা অন্য কাজ করতে হবে। কারণ নিয়ম না মেনে ইলিশ ধরতে গেলে জেল খাটতে হয়।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ২২ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় মা ইলিশ রক্ষায় নৌ পুলিশ খুবই তৎপর থাকবে। আমাদের থানা পুলিশ ছাড়াও এ বছর অভয়াশ্রম এলাকায় নৌ পুলিশের দেড় হাজার সদস্য নদী টহলে থাকবে। কোনো জেলেকে নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। কেউ আইন অমান্য করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অভয়াশ্রমে নদী সংলগ্ন খালগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে করে কোনো জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে না পারেন। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করে জেলেদের বুঝিয়েছি, তারা যেন মা ইলিশ না ধরেন।

তিনি আরও বলেন, ২২ দিনের নিষিদ্ধ সময়ের জন্য সরকার জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দিয়েছে। গত বছর ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এ বছর তা বাড়িয়ে ২৫ কেজি করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম এলাকায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স নিয়মিত কাজ করবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো জেলে নদীতে মা ইলিশ আহরণ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।