ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন নারীরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২২
পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন নারীরা পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলছেন নারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী এখন দেবীদুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার পালা। দেশের বিভিন্ন জেলার মতো বগুড়ায়ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

তাদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজায় আজ বিদায় বেলায় বগুড়া ডালপট্রি, চেলোপাড়া, মালতিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে মণ্ডপে আনন্দের সঙ্গে দুর্গা মাকে সিঁদুরে রাঙিয়ে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। বিজয়া দশমীর তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর সময় সন্নিকটে চলে এসেছে।

ভোর থেকেই পূজামণ্ডপগুলোতে বাজছে বিদার সুর। শেষ বেলায় দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্যস্ত ভক্তরা। বিদায় মুহূর্তে মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা মেতেছেন সিঁদুর খেলায়। বগুড়া শহরের বিভিন্ন মন্দিরের চিত্র ছিল আনন্দময় ও উৎসবমুখর। ঢাকের তালে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন সব বয়সের নারীরা। তাদের একে অপরকে রঙে রাঙিয়ে আনন্দ উৎসব করতে দেখা গেছে।

 

বুধবার (৫ অক্টোবর) বগুড়া শহরের ডালপট্রি, চেলোপাড়া, মালতিনগর, জলেশ্বরীতলা, দত্তবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকার পূজামণ্ডপে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

বগুড়ার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ভক্তরা একে অপরের কপালে সিঁদুর দিচ্ছেন। গালে গালে কেটে দেন সিঁদুরের আঁচড়। পাশাপাশি বিভিন্নভাবে আনন্দ উল্লাস করতে থাকেন ভক্তরা এবং সাধারণ দর্শনার্থীরা পরিদর্শন করেন বিভিন্ন মণ্ডপ। সকাল থেকেই তারা দেবী দুর্গার দর্শন পেতে ছুটছেন মণ্ডপগুলোতে। মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছেন আর মনের বাসনা পূরণে মায়ের আশীর্বাদ কামনা করছেন তারা।

এদিকে সকালে নির্ধারিত সময়ে উলু ধ্বনি, ঢাকের বাদন, কাসর, ঘণ্টা ও শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর যথা নিয়মে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার পূজা। আর বিভিন্ন ভোগ্য সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপে রাখা দেবী দুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন ভক্ত সাধারণ। বিজয়া দশমীতে পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি সবার। সকাল থেকেই মণ্ডপে ভিড় করতে থাকেন ভক্ত সাধারণ ও দর্শনার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানায় কানায় ভরে যায় মণ্ডপগুলো। ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপগুলো। আজকের দিনটিতে মা দুর্গাকে সিঁদুর দিয়ে তারপর নিজেরা এক অপরকে সিঁদুর দেন সনাতন ধর্মালম্বী নারীরা। এটি সনাতন নারীরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ হিসেবে নিচ্ছেন।

প্রতি বছরের মতো চেলোপাড়ার নববৃন্দাবন হরিবাসর মন্দিরে সিঁদুর খেলতে ও দেবী দুর্গা মায়ের আশীর্বাদ নিতে আসা শর্মিলা রানি, আরতী রায়, মিমি ঘোসসহ কয়েকজন ভক্ত বাংলানিউজকে জানান, আজ দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিতে হবে। ধর্মীয় বিধানমতে দেবী দুর্গাকে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই বিদায়ের দিন হওয়ায় সকাল সবাই পূজামণ্ডপে এসেছেন তারা।

তারা বলেন, পূজা অর্চনা করেছেন। অতীত জীবনের পাপ মোচন ও অশুভ শক্তির কবল থেকে বাঁচতে দেবী দুর্গার কাছে আশীর্বাদ কামনা করেছেন। সেসঙ্গে তাদের পরিবারের সব সদস্যই নাচে-গানে ও সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন।

বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিবাহিত বিভিন্ন বয়সী নারীরা সিঁদুর খেলায় মেতে উঠছেন। বিবাহিত নারীরা প্রত্যেক দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলে থাকেন। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

তিনি বলেন, গোধূলি লগ্নের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। এ বছর জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদরে ১২০টি, শাজাহানপুরে ৫৬টি, শিবগঞ্জে ৬৩টি, সোনাতলায় ৫০টি, সারিয়াকান্দিতে ২০টি, ধুনটে ২৯টি, গাবতলীতে ৭৩টি, শেরপুরে ৯০টি, নন্দীগ্রামে ৪৬টি, কাহালুতে ৩৬টি, আদমদীঘিতে ৬৫টি এবং দুপচাঁচিয়ায় ৪২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২৪০টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ২৮৯টি সাধারণ হিসেবে ধরা হয়।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমা বিসর্জন দিতে সবাই হেঁটে বা ট্রাকে করে ছুটবে নদীর তীরে। এবার করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে পূজাকে ঘিরে আনন্দের পরিমাণটা গেল দুই বছরের চেয়ে বেশি ছিল বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। স্বাস্থ্য সচেতন থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২২
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।