ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌডুবি, বাবা হারানো দুই পরিবারকে পূজার উপহার শুভসংঘের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
নৌডুবি, বাবা হারানো দুই পরিবারকে পূজার উপহার শুভসংঘের

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার আউলিয়ার ঘাট থেকে দুই কিলোমিটার দূরের গ্রাম মাড়েয়া বটতলি। এই বটতলি এলাকার দরিদ্র দিনমজুর জগদিশ চন্দ্র রায়।

মা ননিবালা, স্ত্রী ফুলমতি বালা, দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে কৌশিক আর দেড় বছরের মেয়ে রাধিকার বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন ছিলেন জগদিশ। চারটি মুখে প্রতি বেলা অন্ন তুলে দিতেন যে মানুষটি তাকেই হারিয়েছেন নৌকা ডুবিতে। পরিবারের একমাত্র বটবৃক্ষকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।

জগদিশের বাড়ির ঠিক বিপরীত দিকে কয়েকশ মিটার গেলেই সেন্টু বর্মনের বাড়ি।

তারও অবস্থা একই রকম। বাড়িতে মা পার্বতী বেওয়া, স্ত্রী ভৈরবি রানী আর এক বছরের মেয়ে জ্যোতি। পরিবারের আয়ের একমাত্র পথ সেন্টুর দুই হাত। দিনভর মানুষের কাজ করে যা পেতেন তাই দিয়ে চলতো সংসার। কিন্তু নৌকাডুবিতে তারও মৃত্যু হয়েছে।

এই দুই পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা। এবার পূজায় কেনা হয়নি নতুন কাপড়ও। অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় যখন দুশ্চিন্তার বেড়াজালে আবদ্ধ পরিবার দুটি সেই সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পঞ্চগড় শুভসংঘের সদস্যরা।

বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তারা জগদিশ ও সেন্টুর বাড়িতে গিয়ে তাদের স্ত্রী সন্তান ও মায়ের জন্য পূজা উপলক্ষে নতুন জামা, ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল ব্যাগ ও শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেন। উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছোট শিশুর জন্য ল্যাকটোজেন দুধ, নুডুলস ও চকলেটও ছিল। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য পরিবার দুটিকে এক জোড়া করে ছাগল দেওয়া হয়।

এ সময় শুভসংঘ পঞ্চগড়ের উপদেষ্টা ও পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর আরিফ হোসেন, শুভসংঘ পঞ্চগড়ের সভাপতি ফিরোজ আলম রাজিব, সহ-সভাপতি নাসিম আহম্মেদ নয়ন, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহম্মেদ মৃধা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান বাপ্পী ও সাথী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল আলিম লাবীন, অর্থ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রচার সম্পাদক সামিম হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান সাকিব, প্রকাশনা সম্পাদক আল আমিন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আলী আহসান, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জু ইসলাম, কার্যকরী সদস্য সিরাজুম মুনিরা, রাব্বি হোসেন, মোশারফ হোসেন। শুভসংঘের এমন ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে পড়েন দুই পরিবারের সদস্যরা।

মৃত জগদিশের স্ত্রী ফুলমতি বলেন, আমার স্বামী চলে গেছেন তাকে আর ফিরে পাবো না। আমার সন্তানগুলো মানুষ করার জন্য আপনারা যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা ধন্যবাদ দিয়ে প্রকাশ করার মতো নয়। আপনারা আমার সন্তানগুলোর জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন ভালোভাবে লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে পারে।

জগদিশের মা ননিবালা বলেন, মোর বেটা চলে গেইছে, তোমরায় এলা মোর বেটার মতন’। নাহিলে এত কিছু ধরে কায় আইসে? ভগবান তোমরার মঙ্গল করুক।

সেন্টু বর্মনের স্ত্রী ভৈরবি রানী বলেন, আমার স্বামী আমার মেয়েকে পূজায় নতুন জামা কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। নৌকাডুবিতে আমাদের অকূল সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছে ওপারে। তার ইচ্ছেটা আপনারা পূরণ করলেন। আমাদের সবার জন্য পূজার নতুন জামা-কাপড় এনেছেন। দুটো ছাগল দিয়েছেন। আপনজন না হলে কেউ এভাবে পাশে দাঁড়ায় না।

পঞ্চগড় শুভসংঘের সভাপতি ফিরোজ আলম রাজিব বলেন, নৌকাডুবিতে যেসব মানুষ মারা গেছেন তাদের মধ্যে এই দুটি পরিবার খুব অসহায়। সম্পদ বলতে তাদের ভাঙা ঘরবাড়ি আর ভিটেটুকু। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। তাই আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় পরিবার দুটির পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের পূজার উপহার দেওয়ার পাশাপাশি দুইটি করে ছাগল দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এমন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। শুভ কাজের এই ধারা অব্যাহত থাকুক।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad