ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যানবাহন উঠলেই মনে হয় সেতু যেন দুলছে!

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
যানবাহন উঠলেই মনে হয় সেতু যেন দুলছে!

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত যাওয়ার পথে দুটি সেতু রয়েছে। কম করে হলেও ৩০ বছর আগে নির্মিত হয় শরীয়তপুর জেলা শহরের কাছে কোটাপড়ার প্রেমতলা ও জাজিরার কাজীরহাট সেতু।

 

এ সেতু দুটি অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় বর্তমান অবস্থা অনেকটাই নাজুক। সেতুর ওপর যানবাহন উঠলেই মনে হয় যেন দুলছে। এছাড়া সেতু দুটি সরু হওয়ায় দুই প্রান্তে যানজট লেগে থাকে। এ কারণে নতুন করে দুটি সেতু নির্মাণ করতে দুই বছর আগে সরকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন করে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের অজুহাতে সেতু দুটির নির্মাণকাজ এখন বন্ধ হয়ে আছে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পুরোনো এ সেতু দিয়েই পার হচ্ছে হাজার হাজার গাড়ি ও যাত্রী সাধারণ।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রাস্তা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই সড়ক দিয়েই ঢাকামুখী যানবাহনগুলো চলাচল করছে। ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীতে ১১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের কোটাপাড়া সেতু ও জাজিরা উপজেলার কাজির হাট বন্দর এলাকায় মরা কীর্তিনাশা নদীর ওপর ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের কাজীরহাট সেতু নির্মাণ করে। দীর্ঘ ৩১ বছরে সেতু দুটির অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সেতুর মেঝের প্লাস্টার ও রেলিং থেকে রড বেরিয়ে গেছে। প্রেমতলা সেতুতে যানবাহন উঠলে মনে হয় যেন দুলতে থাকে। তখন যাত্রী ও চালকরা ভয়ে আঁতকে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে শরীয়তপুর সওজ বিভাগ ভারী যানবাহন নিয়ে সেতুতে না ওঠার আহ্বান জানিয়ে দুই প্রান্তে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু সংযোগ সড়কটি টু-লেনে উন্নীত করতে ২০২০ সালে ১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুর জেলা শহরের কোটাপাড়ার ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতু এবং জাজিরা উপজেলার কাজীরহাটে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই দুটি সেতু নির্মাণ করার জন্য গত বছরের ১ এপ্রিল জামিল ইকবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ধীরগতিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রেমতলা সেতুর ৫০ শতাংশ কাজ হলেও কাজীরহাট সেতুর কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশের ও কম। বর্তমানে সেতু দুটির নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. হাসান আলী বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার জন্য সেতু দুটির কাজ বন্ধ আছে। নদীর অংশের কিছু কাজ তাঁরা করেছেন। কিন্তু সংযোগ সড়কের অংশে স্থানীয় লোকজন জমির অধিগ্রহণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় কাজ করতে দিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের গাড়িচালক আশেক আলী ও মজিদ মিয়াসহ অনেকেই বলেন, কোটাপাড়া সেতুটিতে গাড়ি উঠলেই শিশুদের খেলনার মত দুলতে থাকে। তখন আমাদের ভয় লাগে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। দীর্ঘদিন ধরে সরকার টেন্ডার করলেও প্রশাসনের নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, কাজীরহাট ও প্রেমতলা সেতু দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ও সরু। প্রকল্প অনুমোদিত হলেও নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এখনো শেষ করা যায়নি। এ কারণে নির্মাণকাজ আটকে আছে। আর সেতু দুটি নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলাবাসীর দুর্ভোগ কমানো যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেকগুলো ধাপ পার করে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়। এ জন্য একটু দেরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ৮ ধারার নোটিশ দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে শরীয়তপুরের সড়ক ও জনপথকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।