ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রহিমা নিখোঁজের ‘নাটকে’ কারাগারে যারা, তাদের কী হবে?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
রহিমা নিখোঁজের ‘নাটকে’ কারাগারে যারা, তাদের কী হবে?

খুলনা: নানা নাটকীয়তার পর মরিয়ম মান্নানের মা প্রায় এক মাস নিখোঁজে থাকা রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য মামলা করেন তার মেয়ে।

ওই মামলায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যারা এখন কারাগারে।

রহিমা বেগম উদ্ধার হওয়ার পর গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। বিষয়টি জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা।

রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় ছুটে যান এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তিনি জানান, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তার সন্তানরা কেন এই অপহরণের নাটক সাজালো সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে এ মামলায় আটক ফুলবাড়িগেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ দিন ধরে বিনা অপরাধে জেল খাটছেন আমার স্বামী। আগস্টের ৩০ তারিখে আমার স্বামী আটক হন আর সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে আমার মেয়ে হয়েছে। অক্টোবরে আমার বাচ্চার ডেলিভারির তারিখ ছিল। কিন্তু স্বামী আটক হওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আগেই সিজার করে আমার মেয়ে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমি আমার স্বামীকে কাছে পাইনি। বিনা অপরাধে জেল খেটে আমাদের হয়রানি, অর্থদণ্ড, মানহানি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে আটককৃতরা কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। আমার স্বামী বের হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। আমরা আশা করছি, দ্রুত আমার স্বামী ছাড়া পাবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী মো. মাছুম বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন সে কারণে তার নিখোঁজের মামলায় যারা জেলে রয়েছেন তাদের তো কোন সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে না। এখনো প্রমাণিত হয়নি যে আসামিরা নিখোঁজের বিষয়ে জড়িত। দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার বিধান রয়েছে। এছাড়া মিথ্যা নালিশ আনয়নকারী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় জেল খাটছেন তারা যদি আইনি সহযোগিতা চান তাহলে আমি বিনিময় ছাড়া সহযোগিতা করবো।

খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। সেসময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার ওই বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘসময় পরও তার খোঁজ না পাওয়ায় ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টায় দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মেয়ে আদুরী।

এরপর পুলিশ ও র‌্যাব  ছয়জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হয়।

এদিকে, শুক্রবার দুপুরে রহিমা বেগমের মেয়েরা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ ‘নিজেদের মায়ের লাশ’ দাবি করলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের পরনের কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানায় রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তবে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন উদ্ধার হওয়া নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল দাবি করে লাশের ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

আরও পড়ুন>> 
* কিছুই বলছেন না রহিমা বেগম!
*
সেই রহিমাকে উদ্ধারের পর যা বলল খুলনার পুলিশ
ফরিদপুর থেকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেল সেই রহিমা বেগমকে

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।