ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কিছুই বলছেন না রহিমা বেগম!

মাহবুবুর রহমান মুন্না,ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
কিছুই বলছেন না রহিমা বেগম! রহিমা বেগমসহ অন্যরা।

খুলনা: প্রায় এক মাস আত্মগোপনে থাকার বিষয়ে খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগম কোনো কিছু বলছেন না। কিছুটা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে।

ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে আসা হয় দৌলতপুর থানায়। উদ্ধারের পর থেকে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত চুপচাপ রয়েছেন রহিমা বেগম। এমনকি তার সন্তানদের সাথেও কথা বলছেন না।

পুলিশের দাবি, পুলিশের টিম ফরিদপুরের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন, রহিমা বেগম দুই নারীর সঙ্গে কথা বলছেন। তাদেরকে দেখার পর থেকেই তিনি কথা বলা বন্ধ করে দেন। পুলিশ সদস্যরা তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। এখনো পর্যন্ত তিনি কোনো কথা বলেননি। কথা বললেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য। এমনকি তিনি কোন খাবারও খেতে চাচ্ছেন না।

শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের কাছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপির) উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন রহিমাকে উদ্ধারের বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, যে বাড়িতে রহিমা বেগম অবস্থান করছিলেন সেই বাড়ির কুদ্দুসের স্ত্রী, ছেলে ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।  

তারা জানিয়েছেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম তাদের বাড়িতে যায়। তখন তার একটি ব্যাগে দুই প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল। প্রথমে চিনতে কষ্ট হয়েছিল। এক সময় কুদ্দুস খুলনার সোনালি জুট মিলে কাজ করার সময় রহিমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। রহিমা বেগম তাদের কাছে ১৭ সেপ্টেম্বরের আগে চট্টগ্রাম ও মোকছেদপুরে থাকার কথা জানিয়েছেন। মামলাটি যেহেতু পিবিআইতে হস্তান্তর হয়েছে, তারা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখবেন।

রোববার সকালে রহিমা বেগমের একমাত্র ছেলে এম এ সাদি বাংলানিউজকে বলেন, আমি, বোন মরিয়ম মান্নান, আদরী, মাহফুজা, কানিজ ফাতেমা এক সঙ্গে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। বোনরা কান্নাকাটি করলেও মা কোনো কথা বলেননি। নির্বাক তাকিয়ে ছিলেন।

এর আগে ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম (৫২)। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পাননি তারা। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নামোল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।  

এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব-১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।  

এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান।  

২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় পার করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। তিনি ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্যও সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর (আজ) ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।