ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রী অদিতাকে হত্যা করেন কোচিং শিক্ষক রনি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রী অদিতাকে হত্যা  করেন কোচিং শিক্ষক রনি অভিযুক্ত শিক্ষক রনি (ডানে)

নোয়াখালী: নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন কোচিং শিক্ষক আবদুর রহিম রনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে জেলার শিক্ষাঙ্গন ও রাজপথ।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানান, দুপুরে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি।

অভিযুক্ত আবদুর রহিম রনি (৩০) নোয়াখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার লাতু কাউন্সিলরের বাড়ির খলিল মিয়ার ছেলে।

প্রেস কনফারেন্সে এসপি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রনি নামে এক যুবকের কাছে প্রাইভেট পড়ত নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অদিতা। হঠাৎ করে অদিতা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে অনীহা প্রকাশ করে এবং নতুন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। এতে রনি ক্ষুব্ধ হয়। এ বিষয়সহ অদিতার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তাৎক্ষণিক রনিকে প্রথমে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তখন তার তুথনি ও ঘাড়ে নখের আঁচড়ের তাজা দাগ পাওয়া যায়। নখের আঁচড়ের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করে। আঁচড়ের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তার বিষয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। তখন তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষে্য আদালতে সোপর্দ করে ১০দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।
আদালত রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।    

এসপি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অদিতার বাসায় যান সাবেক কোচিং শিক্ষক রনি। বাসায় গিয়ে বন্ধ দরজা নক করলে অদিতা দরজা খুলে দেয়। তখন তিনি বাসায় ঢুকে অদিতার সঙ্গে গল্পগুজব করেন। গল্পগুজবের একপর্যায়ে রনি অদিতাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় অদিতা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে রনি বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে রান্না ঘর থেকে ছোরা এনে অদিতার বাম হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেয়।

এরপর রনি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে রূপ দিতে ঘরের আলমিরা ও ওয়ারড্রবের জামা-কাপড়, কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রুমের দরজা লক করে এবং মূল ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

শনিবার দুপুরে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি রনি এসব কথা বলেন।
 
প্রসঙ্গত, গত বৃহষ্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালী শহরের মাইজদীতে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) গলাকেটে হত্যা করা হয়। নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের পরপর পুলিশের একাধিক দল পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি সাবেক গৃহ শিক্ষক আবদুর রহিম রনি (২০), ইসরাফিল (১৪) ও তার ভাই সাঈদকে (২০) গ্রেফতার করে। শুক্রবার আদালত রনির ৩ দিনের মঞ্জুর করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।