ঢাকা: সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সৃষ্ট অচলাবস্থা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তাদের তরুণদের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে। মুসলিম বিশ্বের শরণার্থী সংকট সমাধান ও তরুণ শরণার্থীদের প্রয়োজন মোকাবিলায় ওআইসিকে তার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রীদের ৫ম সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই বিশাল সংখ্যক শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক শরণার্থী তরুণরা হতাশা থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও মানব পাচারের মতো অনেক ধরনের অবৈধ ও বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়ে সমাজে ভয়ংকর সমস্যা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাদের প্রত্যাবাসনের রাজনৈতিক সমাধান দেখা যাচ্ছে না, যা এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর যুব সমাজের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
জাবেদ পাটোয়ারী আরও বলেন, বৈশ্বিক সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচিতে তরুণদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যুব সমাজের জন্য কারিগরি শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বজুড়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এবং এ বিষয়ে বিনিয়োগ যুব সমাজের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ বিষয়ে এলডিসিভুক্ত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার জন্য ওআইসির সদস্যভুক্ত উন্নত দেশ এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রদূত।
পাশাপাশি, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার উপরও তিনি জোর দেন, যাতে করে তরুণরা এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশেষ করে সন্ত্রাস, চরমপন্থা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর মতো বিষয়গুলো থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকতে পারে।
রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশই তরুণ, যাদের সকল জাতীয় উন্নয়ন নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে যুব সমাজকে উন্নয়নের অংশীদার করা হয়েছে, যা আমাদের উন্নয়ন ও সমাজ বিনির্মান প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল-২০২০’ এর কর্মসূচি সফল করার জন্য আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত সভাকে অবহিত করেন।
জেদ্দাতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওআইসির যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীদের এই ৫ম সম্মেলনে সৌদি আরবের ক্রীড়া মন্ত্রী যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন তুর্কি আল ফয়সাল সভাপতিত্ব করেন। ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী ছাড়াও ওআইসি মহাসচিব, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক এর প্রেসিডেন্টসহ ওআইসির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রধানরা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সম্মেলন শেষে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
টিআর/এমজেএফ