ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁদাবাজদের অত্যাচারে দিশেহারা মিরপুরের হকার-ব্যবসায়ীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
চাঁদাবাজদের অত্যাচারে দিশেহারা মিরপুরের হকার-ব্যবসায়ীরা শাহাদাৎ বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ‘মনির’

ঢাকা: চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজধানীর অন্যতম এলাকা মিরপুর-১, দারুসসালাম, শাহআলী ও চিড়িয়াখানা রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে রাস্তার পাশের ফুটপাতে বসা হকারদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

বাদ পড়ছেন না বিভিন্ন মার্কেটে পজিশন নিয়ে বসা হকাররাও। চাঁদাবাজদের নামে থানায় অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাৎ বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মনিরের নেতৃত্বে ডজন খানেক সদস্য এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। এলাকার নেতা ও তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাস্তানদের চাঁদা এবং পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়েই ফুটপাতে বসতে হচ্ছে হকারদের। ওই চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা নির্যাতন চালায় ভুক্তভোগীদের ওপরে।

ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি কিছু উঠতি মাস্তানদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মাস্তানরা ২৫-৩০ জন কিশোরকে দলে ভিড়িয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করেছে। এরাই জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

জানা যায়, সম্প্রতি মিরপুর-১ নম্বর, দারুসসালাম ও শাহআলী থানা এলাকায় মনিরের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এমনই একটি গ্রুপ। যারা ওই এলাকার প্রতিটি ক্ষুদ্র, মাঝারি ব্যবসায়ী ও হকারদের কাছ থেকে দিনহারে চাঁদা আদায় করছে। তাদের টাকা দিতে না চাইলে শুরু হয় হামলা ও নির্যাতন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে দ্বিমুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। পুলিশ অভিযোগ শুনলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। আর এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে নির্যাতন চালাতে শুরু করে।

ভুক্তভোগী মো. জামাল হোসেন বলেন, গত ২০ জুন রাত ৯টার দিকে আমার হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে মনির কল করে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন। ওই সময় তিনি হুমকি দিয়ে আমাকে বলেন- মিরপুর এলাকার থাকতে দেবেন না। পরবর্তীতে আমি নিজের নিরপত্তার জন্য ২৮ জুন মিরপুর মডেল থানা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।  

মিরপুর মডেল থানার এএসআই মুকুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার মনে নেই। কোন মনির হোসেন চিনতে পারছি না। সাধারণ ডায়েরির কপি না দেখলে বলতে পারবো না।

চলতি বছরের ১৩ জুন শাহ আলী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলন হোসেনের দোকানে হামলা চালায় মনির বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় ২০ জুন তিনি শাহআলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

মিলন বলেন, রাস্তার পাশে ব্যবসা করতে গেলে কয়েকটি ধাপে চাঁদা ও ঘুষ দিয়েই ব্যবসা করতে হয়। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু যখন এর বাইরেও চাঁদা দিতে হয় তখন ব্যবসায়ীদের পুঁজি ভেঙে খাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না।

তিনি বলেন, ফুটপাতে খুবই কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখন প্রচুর দোকান থাকায় খুব বেশি লাভও হয় না। তার মধ্যে থানা, পুলিশ, লাইনম্যান, ঝাড়ুদার, সোর্স এবং এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আলাদা আলাদা করে টাকা দিতে হয়। কেউ দিন হিসেবে আবার কেউ সপ্তাহ হিসেবে এসব টাকা আদায় করে থাকেন। তার মধ্যে এখন যুক্ত হয়েছে মনির বাহিনী। কিছু কিশোর ও উঠতি বয়সী যুবকদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি দোকানে চাঁদাবাজি করে তারা। না দিলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

শাহআলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, জিডির আসামি ধরার আগে মামলার তদন্তের অনুমতি নিতে হয় কোর্ট থেকে। কোর্ট বাদীকে ডেকেছেন। বাদী যেভাবে অনুমতি পাবেন আমি সেভাবেই ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগ করে নুর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, মনিরের এ দলে সাইদুল, হাসান, সিরাজ, বড় সুমন, বাবুসহ ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। এরা প্রত্যেকে এলাকা ভাগ করে চাঁদা আদায় করছে। কেউ দিতে না চাইলে সবাই একসঙ্গে গিয়ে হামলা চালাচ্ছে।  

তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ফলে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে যায়। ফুটপাতে সামান্য লাভে পণ্য বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু সেই সামান্য লাভের টাকা থেকে যদি এভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে ভাগ দিতে হয় তাহলে আর কিছুই থাকে না। এখন দেখা যাচ্ছে পুঁজি থেকেই চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা এসব সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি জানিয়েছে। তা না হলে তারা ব্যবসা করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এমএমআই/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।