ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করে চিকিৎসক! 

মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করে চিকিৎসক! 

নাটোর: এসএসসি পাশ করে বিডিআররে (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস এবং বর্তমানে বিজিবি বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) একজন সিপাহী হিসেবে যোগদান করেছিলেন আব্দুল করিম লোহানী। পরে ওই চাকরি ছেড়ে এসে গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

এরপর সুযোগ বুঝে মৃত একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নাম ও ছবি বদলে নিজ নামে তৈরি করেন জাল সনদ। নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে। এভাবে ৩২ বছর ধরে তিনি রাজশাহী, নওগাঁসহ নাটোরের বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দিয়ে আসছেন চিকিৎসাসেবা। এমনকি তিনি ডেলিভারি-সার্জারিসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশনও করতেন। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে পুলিশের হাতে আটকের পর মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে যেতে হলো কারাগারে।  

সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল বাজারের জাহাঙ্গীর জেনারেল হাসপাতালে এক অন্তঃসত্ত্বার সিজার করেন। দুপুরে তার নবজাতকটি মারা যায়। এ নিয়ে হাসাপাতালে চলতে থাকে তুমুল হৈ চৈ। শেষ পর্যন্ত ঘটনা প্রশাসন পর্যায়ে গড়ায়। বিকেলে আরও একটি অপারেশন করার প্রস্তুতিকালে হাজির হন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ পুলিশ। এসময় তার সনদপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন এবং নিজেকে এমবিবিএস ও এফসিপিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক বলে দাবি করেন। এমনকি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ১৭তম ব্যাচে পাস করেছেন বলেও দাবি করেন।  

পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে তারা জানতে পারেন আব্দুল করিম লোহানী নামে একজন এমবিবিএস পাস করা ব্যক্তি থাকলেও তিনি মারা গেছেন। তার সঙ্গে নামের মিল থাকলেও অন্যান্য বিষয়ে মিল নেই। তবুও মৃত ব্যক্তির সনদে তার ছবি যুক্ত করে এমবিবিএসের ভুয়া সনদ তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে রোগী-সাধারণসহ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর প্রতারণার দায়ে তাকে সোমবার দিনগত রাত ৯টার দিকে উপজেলার জোনাইল বাজারের জাহাঙ্গীর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়। এ সময় ক্লিনিকটিও সিলগালা করা হয়েছে।

আটক আব্দুল করিম লোহানী উপজেলার চকপাড়া গ্রামের বাহাজ উদ্দীনের ছেলে।  

অভিযুক্ত ভুয়া চিকিৎসককে আটকের পর জানা যায়, বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করেও রোগীদের অপারেশন করতেন তিনি। তিনি ওই হাসপাতালের পরিচালকও ছিলেন।  

বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খুরশিদ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, সোমবার সকালে জাহাঙ্গীর জেনারেল হাসপাতালে একটি সিজারিয়ান অপারেশন করার পর নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিজারের দায়িত্বরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন রোগীর স্বজনরা। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে যান। এ সময় আরও একটি অপারেশন শেষ করে আব্দুল করিম লোহানী বের হচ্ছিলেন।

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালেও একবার রাজশাহীতে তাকে আটক করা হয়। তিন মাস কারাভোগ শেষে বের হন তিনি। তিনি বলেন, ওই হাসপাতাল মালিক জাহাঙ্গীর আলমও এমবিবিএস পাস না করে নিজের নামের পাশে ডাক্তার লিখে অবৈধ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এসব কারণে তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে এবং তার হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছিল।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে ভুয়া চিকিৎসককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসি বলেন, আব্দুল করিম লোহানী তার ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড ও নাম ফলকে নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। তবে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তার কাগজপত্র পরীক্ষা করে জানতে পারেন তিনি ভুয়া চিকিৎসক।  

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আটক ভুয়া চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে এভাবে অস্ত্রোপচার করে আসছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।