ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

জলসীমা অতিক্রম

ভারতে চিকিৎসাধীন ১ জেলের মৃত্যু, ৮৮ জেলের অপেক্ষায় স্বজনরা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
ভারতে চিকিৎসাধীন ১ জেলের মৃত্যু, ৮৮ জেলের অপেক্ষায় স্বজনরা

পাথরঘাটা (বরগুনা): বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ভাসতে ভাসতে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া এ পর্যন্ত ভারতে রয়েছেন। তাদের ফেরার অপেক্ষায় স্বজনরা।

ওই দেশে আশ্রয় নেওয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউনুস গাজী (৪৭) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (২৮ আগস্ট) সকাল ১০টার সময় বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ভারত থেকে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সকালের দিকে ইউনুস গাজীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই ইউনুস গাজীর মরদেহ ফিরে পেতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পরিবার। ইউনুস গাজী পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার বিপিনপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শুক্কুর গাজীর ছেলে। ৮৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগ জেলের বাড়ি ভোলা, পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুর ও বরগুনার পাথরঘাটার। এসব এলাকার স্বজনরা এখন জেলেদের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি ট্রলারের মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করে ভারতীয় উপকূলরী বাহিনী (আইসিজি), পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় মৎস্যজীবী এবং স্থানীয় পুলিশ। তাদের তৎপরতায় সেসব ট্রলার থেকে উদ্ধার হয়েছে ১২২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী। উদ্ধার করা মৎস্যজীবীদের ধাপে ধাপে বাংলাদেশে পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার (২৯ আগস্ট) আরও পাঠানো হচ্ছে ৮৮ জন মৎস্যজীবীকে। ওইদিন ৮৮ জন মৎস্যজীবীদের পশ্চিমবঙ্গের দণি ২৪ পরগনার কালিন্দী নদীর ধরে তাদের প্রত্যাবাসন করানো হবে। এর আগে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাজ্যের হেমনগর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ভাসমান বিওপি থেকে দুই জন মৎস্যজীবীকে সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। একই দিনে ৩২ জন মৎস্যজীবীকে ভারতীয় কোস্টগার্ড গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশি কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইউনুস গাজীর মেয়ে চম্পা জানান, পটুয়াখালীর মহিপুর থানার বাবুল কোম্পানির মালিকানাধীন এফবি জান্নাত ট্রলারে রহমাতুল্লাহ মাঝির নেতৃত্বে সোমবার (১৫ আগস্ট) বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান। এর পরে ১৮ আগস্ট ঝড়ের কবলে পরে এবং এর পরের দিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ট্রলারটি উল্টে ডুবে যায়। এরপর থেকে ইউনুস গাজী নিখোঁজ হয়। ওই ট্রলারে থাকা ১৪ জেলে বাড়িতে ফিরলেও ৮ দিন কোনো খোঁজ মেলেনি তার বাবা ইউনুস গাজীর। ট্রলারডুবির চারদিন পর ভাসমান অবস্থায় বঙ্গোপসাগর থেকে তার বাবাকে ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করে ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বুধবার ভারতের এক মহিলা চিকিৎসক তার বাবার খোঁজ দেয় এবং বুধবার সন্ধ্যায় তার বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেন। তখন তার বাবা তাকে তার ছোট ভাই-বোনদের দিকে খেয়াল রাখতে বলে এবং তাদের কোনো দিন সাগরে না পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেন।

ভারতের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চম্পা জানান, তার বাবা চারদিন সাগরে ভেসে থাকা অবস্থায় তার শরীরের চামড়া খসে গিয়েছে। দুই দিন আইসিইউতে ভর্তি থাকার পর শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মৃত্যু হয়।

ইউনুস গাজীর স্ত্রী ফাতিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী সাগরে বাঁচার জন্য অনেক যুদ্ধ করেছে। তারপরও বাঁচাতে পারে নাই। আমি একটু শেষ বারের মত আমার স্বামীকে দেখতে চাই। আমার বাড়িতে কবর দিতে চাই।

বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ভারতের কাকদ্বীপে ৪৬ জেলে, রায়দিঘি থানায় ১১ এবং কোস্টাল পুলিশ স্টেশনে ১৭ জন এবং কেনিং এ ১৬ জন জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহিপুরের ইউনুস গাজী মারা গেছে।

তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ইউনুস গাজী মরদেহে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চাচ্ছি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে। এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা চাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।