ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে যুবলীগ নেতার দাপট, সরকারি খালে মাছের ঘের!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
বাগেরহাটে যুবলীগ নেতার দাপট, সরকারি খালে মাছের ঘের!

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সরকারি খাল আটকিয়ে মাছ চাষ করছেন এক যুবলীগ নেতা। তার নাম আরিফ মল্লিক, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের বদ্বিয়ারজান ও পেতনিখালী খাল নেটপাটা দিয়ে আটকিয়ে মাছ চাষ করছেন।

এদিকে প্রবাহমান সরকারি খাল আটকানোয় এলাকার পানি নিষ্কাশন যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। খাল দুটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অন্তত তিন বার আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে খালের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও, অজানা কারণে এখন পর্যন্ত খালটি দখলমুক্ত হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে একটু সামনে গাজীরঘাট, মিত্রডাঙ্গা, হামছাপুর ও চাপড়ী এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল। খাল দুটি মোরেলগঞ্জ উপজেলার অন্যতম বড় খাল হেয়াড়মার সঙ্গে মিশেছে। পেতনিখালী খালের গাজীরঘাট এলাকার মোস্তফা ও আইন উদ্দিনের বাড়ির সামনে নেট ও পাটা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। বদ্বিয়ারজান খালের মোখলেছ সরদারের বাড়ির সামনে, সাইফুলের বাড়ি ও শহীদের বাড়ির সামনে নেট-পাটা রয়েছে। উত্তরগাজীর ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী সালামের বাড়ির সামনেও নেট-পাটা দেওয়া রয়েছে বদ্বিয়ারজান খালে। ফলে ১৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া খাল দুটির প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ আরিফ মল্লিকের ঘেরের মধ্যে রয়েছে। অবৈধ নেট-পাটার জন্য খালের দুই পাশে থাকা শতাধিক বিঘা জমিতে ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে এলাকায়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বদ্বিয়ারজান ও পেতনিখালি খাল দখলমুক্ত করার জন্য চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল তাদের কাছে আবেদন করেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আজহার আলী শেখ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১১মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে খাল দখলমুকাত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বদ্বিয়ারজান খাল কাটা হলেও, পরবর্তীতে আবারও আরিফ দখল করেন। এরপর ১৫ জুন একই দাবিতে আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. আজহার আলী শেখ। পরবর্তী ২১ জুন রাজস্ব শাখা থেকে খাল দখলের বিষয়ে ফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়। এবারও খাল না কাটায় সর্বশেষ ৬ জুলাই আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. আজহার আলী শেখ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এবার ইউএনওকে দায়িত্ব না দিয়ে গত ১৯ জুলাই উপজেলা সহকারি কমিশনার, ভূমিকে (এসিল্যান্ড) দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ওই চিঠির এক মাসের বেশি সময় পার হলেও খাল অবমুক্ত হয়নি। বরং খাল দখলকারীরা এলাকাবাসীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মিত্রডাঙ্গা এলাকার কৃষক মো. সোলেমান শেখ বলেন, মোজাহার মল্লিক ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা আরিফ মল্লিক পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল আটকিয়ে মাছের ঘের করেছেন। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার বদ্বিয়ারজান খাল কেটে দেওয়া হয়েছিল। আবারও তারা খাল দুটি আটকে ঘের করেছে। এখন এই খালের দুই পাশে মোটা ও ইরি কোনো ধান চাষ করার উপায় নেই। খালে একটি হাঁস ও গরু ছাগলও নামতে পারে না। তারা হাঁসও পিটিয়ে মেরেছে আমার। আমরা সরকারি খাল উন্মুক্ত রাখার দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় শিক্ষক পলাশ মন্ডল বলেন, এই খালের পারে আমার দেড় বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু খালটি আটকানোর ফলে আমাদের নানা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। আমরা চাই খালটা মুক্ত হোক।

স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল ও খাল সংলগ্ন মাঠে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু খাল আটকানোর পর আর খালে নামতেই পারি না। শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেকে রয়েছেন, যারা খালে মাছ ধরতে না পেরে কষ্টে আছেন। সরকারি খাল উন্মুক্ত থাকলে আমাদের খুব উপকার হত।

খাল অবমুক্তের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আজাহার আলী শেখ বলেন, আমাদের এলাকার জন্য এই খাল দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মোজাহার মল্লিক ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা আরিফ মল্লিক এই খাল দখল করে মাছের ঘের করেন। এজন্য আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনবার আবেদন করেছি। প্রথমবার আবেদনের প্রেক্ষিতে বদ্বিয়ারজান খালটি কাটা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একই লোকেরা আবারও খালটি দখল করে। সেই সঙ্গে পেতনিখালী খালও দখল করে মাছ চাষ করছে। যে কোনো মূল্যে আমরা এই খালকে দখলমুক্ত করতে চাই।

খাল দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত আরিফ মল্লিক বলেন, আমার ঘেরের মধ্যে একসময় খালের জমি ছিল। জেলা প্রশাসক বলার পর আমি আর ওই খালে ঘের করি না। এছাড়া এই খালে শুধু আমি একা ঘের করি না, এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে অবৈধভাবে দখলকৃত বেশকিছু খাল আমরা দখলমুক্ত করেছি। এই খালটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ  সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।