ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কারাগারে বিয়ে: সন্তান নিয়ে সুখে আছে সেই দম্পতি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
কারাগারে বিয়ে: সন্তান নিয়ে সুখে আছে সেই দম্পতি জহীরের স্ত্রী ও সন্তান

ফেনী: তাদের সংসার জীবনের শুরুটা অন্য মানুষের মতো ছিল না। বিয়ে হয়েছে কারাগারে।

স্বামীর জামিন হয়েছে দাম্পত্য জীবনে সুখে থাকার শর্তে। সেই সংসারে এসেছে সন্তান। বর্তমানে একমাত্র সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তারা।

ধর্ষণের অভিযোগকারীর সঙ্গে অভিযুক্তের বিয়ে, আদালতের ব্যতিক্রমী এ অভিপ্রায় নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণি থেকে নানা রকম লেখালেখি হয়েছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনটা কেমন হয়! এটা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনাও ছিল। সব জল্পনা কল্পনা কাটিয়ে এখন তারা বেশ সুখেই আছেন।

বলছি ফেনীর সোনাগাজীর জহিরুল ইসলাম জিয়া ও তার স্ত্রীর কথা।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ফেনীর সোনাগাজীর উপকুলীয় সোনাগাজীর চর দরবেশে বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে তার স্ত্রীর হাসি মুখ। কোলে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয়েছে আসমা আক্তার রাইফা। গেল বছরের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ তাদের ঘর আলো করে আসে এ সন্তান।  

কথা হলে জহিরের স্ত্রী বাংলানিউজকে জানান, আদালতের কাছে তারা স্বামী-স্ত্রী খুবই কৃতজ্ঞ। তারা এখন খুবই ভালো আছেন। সংসারে কোনো ধরনের কলহ নেই। মেয়ে এবং পরিবারের অন্য সবাইকে নিয়ে তারা বেশ আছেন। স্বামী জহির এখন এলাকায় একটি দোকান দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে বাবার সঙ্গে ফসলের মাঠে গিয়েও কাজ করেন।

জহিরের মা অমলা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের বউকে তিনি পুত্রবধূর চোখে দেখেন না, নিজের মেয়ের মত দেখেন। নিজের মেয়ে যেভাবে আদর যত্নে থাকে ছেলের বউও তেমন আদরে যত্নে আছে।

জহিরের শ্বশুর আবদুল হাই (সাহাব উদ্দিন) বাংলানিউজকে জানান, আদলতের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের মেয়ে একটি সুন্দর সংসার পেয়েছে। মেয়ে এখন বেশ সুখে শান্তিতেই আছে।

যখন তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন জহির ফসলের মাঠে কাজ করতে গিয়েছে। কথা হয় ফোনে। জহির বাংলানিউজকে জানান, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। তাদের ঘরে একটা মেয়ে সন্তান এসেছে, মেয়েকে নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছে।

জহিরের বাবা সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ছেলে ও পুত্রবধু খুব ভালো আছে। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের দাম্পত্য কলহ নেই।

এ মামলার আইনজীবী ছিলেন ফারুক আলমগীর চৌধুরী। কথা হলে ফারুক আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, তারা ভালো আছে জেনে ভালো লাগছে। তাদের সন্তান হয়েছে শুনে খুশি হয়েছি। একদিন তাদের সন্তানকে গিয়ে দেখে আসব। তাদের সুখের সংসারের কথা শুনলে আদলতও খুশি হবেন।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ানের ছেলে জহিরুল ইসলাম জিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী এক মেয়ের গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে উভয়ের সম্মতিতে তাদের সম্পর্ক অনেক দূর গড়ায়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে দু’পরিবার তাদের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু উদ্যোগ সফল না হলে ২০২০ সালের ২৭মে মেয়ের পরিবার থানায় জহিরের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। সে মামলায় পুলিশ জহিরকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সবশেষ জিয়া হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সে বছরের ১ নভেম্বর উভয় পরিবারের সম্মতিতে ওই মেয়েকে বিয়ে করলে জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান আদালত।

পরে দু’পরিবারের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে কারাগারে তাদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়। সে মোতাবেক ১৯ নভেম্বর কনেসহ দু’পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। পরে ৩০ নভেম্বর জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২ 
এসএইচডি/জেডএ

***অবশেষে জামিন পেলেন কারাগারে বিয়ে করা ফেনীর সেই যুবক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।