ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়ের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে হাতুড়িপেটার শিকার বাবার মামলা নিলো পুলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
মেয়ের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে হাতুড়িপেটার শিকার বাবার মামলা নিলো পুলিশ

রাজশাহী: মেয়ের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় হাতুড়ি পেটা করা হয়েছিল তার বাবাকে। মাথায় ১২ সেলাই নিয়ে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন বাবা।

করতে চেয়েছিলেন মামলা। কিন্তু দুই দিনে তিন থানায় কাগজ নিয়ে ঘুরলেও মামলা নেয়নি পুলিশ! 

এ নিয়ে বুধবার (১৭ আগস্ট) গণমাধ্যমে খবর বের হয়। পরে সেই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অবশেষে সেই মামলা নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে আটক করে র‌্যাব।

রাজশাহী গভর্মেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) থানা মামলাটি নিয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নীল মাধব সাহা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় মোট আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিন জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

নীল মাধব সাহার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর মেহেরচণ্ডী এলাকায়। কোথাও মামলা করতে না পেরে বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তাকে প্রতিদিন কলেজে যাতায়াতের সময় প্রেমের প্রস্তাবসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল ওই এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে এরফান খান মেরাজ (২২), সামাদের ছেলে রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স, আক্তারের ছেলে রবিন। এ নিয়ে গত ১২ আগস্ট সকালে প্রতিবাদ করেন নীল মাধব সাহা। এরপর ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই বখাটেরা তাদের আরও ৪/৫ জন সহযোগী নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে থাকা নীল মাধবের পার্লারে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাকে ছুরিকাঘাত ও হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে বখাটেরা।  

নীল মাধব সাহা বলেন, এই হামলার ঘটনার পর তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানা এলাকায় হওয়ায় তিনি প্রথমে ওই থানায় যান। কিন্তু চন্দ্রিমা থানা থেকে বলা হয়- প্রথমে চিকিৎসা নিয়ে আসতে। এছাড়া ঘটনাস্থল মতিহার থানার মধ্যে পড়ায় তাকে চিকিৎসা নেওয়ার পর মতিহার থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এরপর তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয়। চিকিৎসা নিয়ে তিনি মতিহার থানায় এজাহার জমা দেন। কিন্তু ওই থানা পুলিশও মামলা নেয়নি।  

মতিহার থানা থেকে বলা হয়- হামলার ঘটনাস্থল পড়েছে রেলওয়ে থানার মধ্যে। তাই মতিহার থানার পুলিশ তখন তাকে জিআরপি থানায় যাওয়ার কথা বলেন। এরপর গত ১৫ আগস্ট রাত ৮টার দিকে নীল মাধব সাহা রেলওয়ে থানায় যান। কিন্তু জিআরপি থানা পুলিশও তার মামলা নেয়নি।

এরপ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ নিয়ে বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। শেষ পর্যন্ত ১৭ আগস্ট রাতে জিআরপি থানা নীল মাধবের এজাহারটি মামলা হিসেবে নেয়।  

এদিকে, কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবার ওপর হামলার ঘটনায় ৩ বখাটে যুবককে বুধবার (১৭ আগস্ট) দিনগত রাত ২টার দিকে মহানগরীর মতিহার থানাধীন মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়া এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব-৫। তাদের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। তারা মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারী।

আটককরা হলেন- মহানগরীর মতিহার থানাধীন মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়া এলাকার ইউসুফ খানের ছেলে ইরফান খান ওরফে মিরাজ (২৩), মৃত ইনতাজ আলীর ছেলে মো. ফরহাদ (২৭) ও ফরহাদের ভাই আখের আলী (৩২)। এর মধ্যে ইরফান ও ফরহাদ ছাত্রলীগ কর্মী। তারা সবাই মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসবাদ শেষে বিকেলে তাদেরকে রাজশাহী জিআরপি থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর তাদেরকে ওই মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ।

জানতে চাইলে রাজশাহী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কর্মকার বলেন, ১৫ আগস্ট নীল মাধব সাহা আহত অবস্থায় হাসপাতালের ‘পুলিশ কেস’ সিল দেওয়া একটি কাগজ নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ওই দিন তার চিকিৎসার অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে ছিলনা। তাই সব কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। এরপর মামলার কথা বলা হয়েছিল। মামলা নেওয়া হয়নি এই কথা সত্য নয় বলেও দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এসএস/এসএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।