ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

১৫ আগস্ট: আ. লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনার প্রশ্ন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
১৫ আগস্ট: আ. লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনার প্রশ্ন ছবি : পিআইডি

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, দেশের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক একটি অভ্যুত্থানে খুন হন এই বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গেই প্রাণ হারান বঙ্গমাতাসহ পরিবারের অপর সদস্যরা।

এ ঘটনার তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ না হওয়ার আক্ষেপ আছে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার মনে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে তার। খোঁজেন সেই নেতাদের যারা ‘বঙ্গবন্ধু তুমি যেখানে, আমরা আছি সেখানে’ স্লোগান দিতেন।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় নিজের আক্ষেপের কথাগুলো বলেন সরকার প্রধান।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, আমার এটা প্রশ্ন- আমাদের নেতারাও তো এখানে আছেন। জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন। কী করেছিলেন তারা? বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না এটা তার জীবন্ত প্রমাণ। এজন্য আমি কিছু আশা করি না।

এ সময় আক্ষেপের কিছু প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর ধানমন্ডি- লাশগুলো তো পড়েছিল। কত স্লোগান- বঙ্গবন্ধু তুমি যেখানে, আমরা আছি সেখানে। অনেক স্লোগান তো হচ্ছিল। কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো? একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এত বড় সংগঠন, এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহস পায়নি?

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আরও বলেন, ১৫ আগস্ট, ১৬ আগস্ট লাশগুলো পড়ে ছিল। ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়, কারণ দুর্গম পথ। যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই কেউ যেতে পারবে না। তাই সেখানে নিয়ে মা বাবার কবরের পাশে মাটি দিয়ে আসে। সেখানকার মৌলভী সাহেব আপত্তি করেছিলেন যে আমি গোসল দিবো। কাফন পরাবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (জাতির পিতা) কিছু নিয়ে যাননি। শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন, একটা জাতি দিয়ে গেছেন। আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়ে গেছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। বাংলাদেশের গরিব মানুষকে যে রিলিফের কাপড় তিনি দিয়েছেন সেই রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সেটা দিয়েই তাকে কাফন দেওয়া হয়েছিল।

আমার বাবা-মা ভাই বোন কেউ কিছু নিয়ে যায়নি। ওই ১৬ তারিখে সকল লাশ নিয়ে বনানীতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুসলমান হিসেবে এতটুকু দাবি থাকে জানাজা পড়ানো; সেটাও তো পড়েনি। একটু কাফনের কাপড় সেটাও দেয়নি। কিন্তু ৭৫ এর ঘাতকটা হত্যার পর বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামের কোনো বিধান তারা মানেনি।

শুধু আমার একটাই কথা, এই দেশ জাতির পিতা স্বাধীন করেছিলেন, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন বলে। তাই আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল, সব সহ্য করে নীলকণ্ঠ হয়ে শুধু অপেক্ষা করেছি কবে ক্ষমতায় যেতে পারবো। আর এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো। তাহলেই এ ঘটনার প্রকৃত প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কন্যা আরও বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন (শেখ রেহানা) বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত থেকে। কিন্তু এই বাঁচা কত যন্ত্রণার বাঁচা, যারা এভাবে বাঁচে তারাই জানে।

কত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমার বাবার নামে, ভাইয়ের নামে, মায়ের নামে। মিথ্যা অপপ্রচার। কোথায় সেগুলো। কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও দেখে যে না বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময় : ২০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।