ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উত্তরায় দুর্ঘটনা: সেতু বিভাগ-বিআরটি দায় নিতে রাজি নয়

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
উত্তরায় দুর্ঘটনা: সেতু বিভাগ-বিআরটি দায় নিতে রাজি নয়

ঢাকা: ক্রেন থেকে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দায় নেয়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ। বিআরটি সংশ্লিষ্টরা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন কে দায়ী সেটা নিয়ে।

অন্যদিকে সড়ক সচিবের কাছে এ ঘটনায় সড়ক বিভাগ দায় কিনা জানতে চাইলে সেটা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বিআরটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

গার্ডার পড়ে পাঁচ মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও এ দুর্ঘটনার দায় কেউ নেয়নি।

অন্যদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান এ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বিচারহীনতা ও দায়িত্বহীনতা দেখছেন।

বিআরটি কর্তৃপক্ষের বিবরণের সঙ্গে মিল নেই ভিডিও ফুটেজের। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে- রাস্তার মাঝখানে রাখা বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলা হচ্ছিল ট্রেইলারে। একপর্যায়ে ভারসাম্য হারিয়ে ক্রেন একদিকে কাত হয়ে যায়। তখন ক্রেনে থাকা গার্ডারটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। ভারী ওই গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপ্টা হয়ে যায় গাড়িটি।

এ সময় কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ওই ভিডিওতে দেখা যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যেই ক্রেনের পাশ দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করছিল।

তবে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়েই গার্ডার ওঠানো নামানো হচ্ছিল দাবি করে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, গার্ডারটি পড়েছিল নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে। সুতরাং এখানে ক্রেনের ত্রুটির কারণে না চালকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত কমিটিই বলবে। ৮০ টন ওজনের গার্ডার বহনের সক্ষমতা রয়েছে ক্রেনটির।

যদিও ওই ক্রেনের অপারেটরের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না বলে জানিয়েছেন বিআরটি প্রকল্পেরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, হালকা মোটরযান চালানোর লাইসেন্স দিয়েই ৮০ টন ওজন বহনকারী ক্রেন চালাচ্ছিলেন চালক।

এ নিয়ে বিআরটিয়ের প্রকল্প পরিচালক এসএম ইলিয়াস বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। সেটা এখনও আমি পাইনি।  

এ ঘটনায় বিআরটি কর্তৃপক্ষের নিজেদের কোনো দায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি রাস্তায় আছি। বিস্তারিত প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে।

সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার অভিযোগ করেন।

দায় নিতে রাজি নয় সড়ক পরিবহন বিভাগ

সড়ক পরিবহন সচিব আমানউল্লাহ নূরী বলেন, আমরা তদন্ত করছি। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনার দায় নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিআরটি প্রকল্প পরিচালকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দায় কি আমার?  আমি কি মালিক? আমি কি বিআরটিয়ের প্রকল্প পরিচালক? আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন।  

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সাংবদিকদের তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, ওই ক্রেনের সক্ষমতা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিরাপত্তা যথাযথ নয় বলে স্বীকার করেছেন এক বিআরটি পরিচালক

বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা যথাযথ নয় বলে স্বীকার করেছেন বিআরটি পরিচালক ও সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান।

তিনি বলেন, ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর সময় সবগুলো লেন বন্ধ করে একটি লেন গাড়ি চলাচলের জন্য রাখা হয়। কিন্তু সেখানে গাড়ির চাপ বেশি থাকার কারণে যে লেনে গাড়ি চলার কথা না সে লাইনেও গাড়ি চলে যায়। তাদের যে নিরাপত্তার অভাব আছে তা আমি সেদিনও মিটিংয়ে বলেছি। মন্ত্রণালয়ে আমাদের একটা রিভিউ মিটিং হয়েছে যেখানে এডিবির প্রতিনিধিও ছিলেন। সেখানে সেইফটি অডিট করার জন্য আমি মিটিংয়ে বলেছি। এটা নিয়ে গতকালও একটা মিটিং হয়েছে।

দুর্ঘটনার প্রধান কারণ জবাবদিহিতার অভাব

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, এ দুর্ঘটনা নতুন নয়। ২০১৯ থেকে বিভিন্ন সময়ে এখানে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে (বিআরটি প্রকল্পে)। এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। দুর্ঘটনায় তাদের কোনো দায়ভার নিতে হয়নি। কোনো জবাবদিহিতার মধ্যেও তারা আসেননি।

এখানে নজরদারির যথেষ্ট অবহেলা ছিল বিধায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন বুয়েটের এ অধ্যাপক। একইসঙ্গে চালকের অভিজ্ঞতা ও লাইসেন্স আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তিনি।

অতীত দুর্ঘটনায় বিচার না হওয়ায় উত্তরার দুর্ঘটনা ঘটেছে

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এনে বিআরটি প্রকল্পে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। অতীতের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত না করা এবং বিচার না হওয়ায় উত্তরার মতো এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটেছে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু-মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে দামি প্রকল্প হলেও এসব প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন দামি নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩, আগস্ট ১৬, ২০২২
এনবি/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।