ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

একদিনের ভাঙনেই শ্রীহীন কক্সবাজার সৈকত

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
একদিনের ভাঙনেই শ্রীহীন কক্সবাজার সৈকত

কক্সবাজার: লঘুচাপ এবং পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাবনী পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।  

বৃহস্পতিবার প্রথম দিনই সৈকতের লাবনী,শৈবাল ও ডায়াবেটিক পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি এবং ঝাউবন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনে ঝুঁকির মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসনের নির্মিত সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ।

পর্য়টকসহ স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙন রোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়বে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের নাজিরারটেক থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন  পয়েন্টে প্রবল ঢেউয়ের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় লাবনী পয়েন্টে ভাঙন সবচেয়ে বেশি। সৈকতের বালিয়াড়িতে টুরিস্ট পুলিশের বসানো পুলিশ বক্সটিও একের পর এক ঢেউয়ের তোড়ে পানিতে পড়ে যায়। পরে অবশ্য সেটি টুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে যান। তীব্র ভাঙনের কারণে ক্ষতবিক্ষত  সৈকত যেন শ্রীহীন হয়ে পড়েছে।  

ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত চলে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও প্রকৃতি এসব বাধা মানছে না।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙনের এত তীব্রতা আগে কখনো দেখেনি। ঢেউয়ের তোড়ে একদম চোখের সামনেই পুলিশবক্সটি পড়ে যাচ্ছিল। কোনো মতে ঘরটি সাগরে বিলীন হওয়ার আগেই খুলে রক্ষা করা হয়েছে।

ভাঙনের কারণে সৈকত শ্রীহীন এবং চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ভাঙন পরিদর্শন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত একটা ব্যবস্থা হবে।

সৈকতের লাইভ গার্ড কর্মীরা জানান, এ বছরের মতো ভাঙনের তীব্রতা আর কখনো চোখে পড়েনি। ভাঙনের ফলে কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় পর্য়টকদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে টুরিস্ট পুলিশ ভবন,সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ,ছাতা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে বলেও জানান তারা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল। উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিপাত ও দমকা ঝড়ো হাওয়া চলছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দু-চার ফুট বেড়েছে।  
শুক্রবার পূর্ণিমার জোয়ারে পানি আরও বাড়তে পারে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার ট্রলারকে পরবর্তী সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

পাউবো সূত্র মতে, ২০২১ সালে সৈকতে ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নির্দেশে সৈকতের ভাঙন রোধে সীমিত আকারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভাঙন রোধের আওতায় কিছু এলাকায় জিও টিউব দিয়ে দুই কোটি টাকার অস্থায়ী মেরামত কাজ করে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, সৈকতে ভাঙন শুরু হয় মূলত গত কয়েক বছর ধরে। বিশেষ করে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৗসুমে ভাঙছে। তা রোধে প্রাথমিকভাবে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে লাবনী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে। তবে ভাঙনরোধের স্থায়ী সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।  
শুক্রবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসছেন বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভাঙন এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকতের লাবনী পয়েন্টের কিছু অংশে আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট  ১২, ২০২২ 
এসবি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।