ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

'সরকারের দেওয়া উপহারের বাড়িটিতে একাডেমি করতে চাই'

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২২
'সরকারের দেওয়া উপহারের বাড়িটিতে একাডেমি করতে চাই'

রাজবাড়ী: সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িটিকে নিজের নামে 'কাঙ্গালিনী সুফিয়া একাডেমি' হিসেবে দেখতে চান বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। নিজের জিবনদশাতেই তিনি এ স্বপ্ন পূরণ করতে চান।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমনটা জানান। তাকে সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া বাড়িটি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে অবস্থিত। আর তার নাম অনুসারে সেই এলাকাটি এখন কাঙ্গালীনি পাড়া হিসেবে পরিচিত।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার জন্যই এ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছায়। কিন্তু এখন আমার বাড়িতেই বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে একদিন থাকবো এখন সে অবস্থাও নেই। শরীরও ভালো থাকে না। সকালে সুস্থ থাকলে বিকালে অসুস্থ হয়ে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, বাড়িটিতে বাউন্ডারি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু তা হওয়ার আগেই তিনি বদলি হয়ে যান। আমার বাড়িটি থাকার কারণে এখন এলাকার নাম হয়েছে কাঙ্গালীনি পাড়া। জীবনের শেষ ইচ্ছাটি পুরণ করতে চাই এটাই আমার স্বপ্ন।


সুফিয়া বলেন, জীবনে শেষ সময়টা এখানেই কাটাতে চাই। এলাকায় একটি একাডেমি হলে তরুণ প্রজন্ম কিছু শিখতে পারবে। এ কারণেই উদ্যোগ নিয়েছি বাড়িটেতে নিজের নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবো। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তা করা সম্ভব হবে।

সুফিয়া আরও বলেন, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে চিকিৎসার ব্যায় ভার মেটাতে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। এখন আর আগের মতো স্টেজ প্রোগ্রাম করতে পারি না। তবে অসুস্থ হলেও গান গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না। এখনও একতারায় সুর তুলে গান গাইতে পারি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, বেঁচে থাকতেই যেন আমার শেষ ইচ্ছাটি পূরণ হয়।

আরশী নগর লালন স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম আক্কাস বাংলানিউজকে বলেন, রাজবাড়ীতে একটি একাডেমি হলে এলাকার সংগীত অনুরাগীরা উপকৃত হবে। কাঙ্গালিনী সুফিয়া একজন জাতীয় শিল্পী। তার স্মৃতি ধরে রাখতে একাডেমি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ইতোপূর্বে কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাকে সাহায্যে করা হয়েছে। তবে তিনি সরকারি ভাতা পান সাভার এলাকা থেকে।

উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া কাঙ্গালিনী সুফিয়ার আসল নাম টুনি হালদার। জন্ম ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্পির বাবার নাম খোকন হালদার ও মা টুলু হালদার। তিনি লালন গীতি, লোকসঙ্গীত, বাউল গান করেন। একতারা হাতে ১৯৭৫ সাল থেকে গান গেয়ে আসছেন। তিনি কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই, পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে, নারীর কাছে কেউ যায় না, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া প্রভৃতি গানের জন্য বিখ্যাত।

গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে তিনি তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুধির হালদার নামের একজন বাউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৮ সালে। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তার গুরু দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত। তার প্রিয় শিল্পী লালন ফকির ও আব্দুল আলীম। সুফিয়ার মোট রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তিনি রাজ সিংহাসন চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক ডিজি মুস্তাফা মনোয়ার তাকে কাঙ্গালিনী উপাধি দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি সুফিয়া খাতুন থেকে দেশব্যাপী কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামে পরিচিত হন। দেয়াল, নোনাজলের গল্প প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। আর তারই রচিত 'বুড়ি হইলাম তোর কারণে' গানটি অবলম্বনে নির্মিত হয় নোনাজলের গল্প। সেখানে সুফিয়া প্রধান চরিত্রে একজন বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৭ সালে বুকের ভেতর আগুন নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সংগীতে তিনি প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।