ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু সময় বাঁচালেও 'পকেট কাটছে' পরিবহন মালিকরা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২২
পদ্মা সেতু সময় বাঁচালেও 'পকেট কাটছে' পরিবহন মালিকরা

ঢাকা: পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের সেতু। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তার প্রতীক এই সেতু দিয়ে ২১ জেলার মানুষ বিড়ম্বনা ছাড়াই অতি দ্রুত পার হতে পারছেন।

জেলাভেদে সময় বাঁচছে দুই থেকে ৬ ঘণ্টা।

কিন্তু এই সুফলের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন বিড়ম্বনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটে সরকার বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও মানছে না পরিবহন কোম্পানিগুলো। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

স্বল্প খরচে সহজে যে নিরাপদ যাত্রা হতে পারতো যাত্রীদের, সেখানে টিকিট কাটতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার (১ আগস্ট) রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি ও অন্যান্য বাস কাউন্টারগুলো সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

সেখানে দেখা যায়, ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে বিআরটিসির নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বাসমালিকরা। তাছাড়া যখনই গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়, তখনই বতারা আসন সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে খুলনা ও পিরোজপুরের ভাড়া আদায় করেন।

এ রুটে নির্দিষ্ট কোনো পরিবহনের বাস না থাকায় বাড়তি সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের মালিকরা। আগে কয়েকটি পরিবহনের বাস এ রুটে চলাচল করলেও বর্তমানে সব বাস পার্শ্ববর্তী জেলা খুলনা ও পিরোজপুর পর্যন্ত চলাচল করছে এবং তারা গোপালগঞ্জের যাত্রী নিচ্ছে সিট খালি থাকা সাপেক্ষে।

ঢাকায় একটি অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এস এম খালিদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল অনেকে পেলেও পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনায় গোপালগঞ্জবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকার বাস কাউন্টারগুলোতে গেলে বলা হয়, গোপালগঞ্জের টিকিট নেই। বাধ্য হয়ে গোপালগঞ্জগামী যাত্রীদের খুলনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের টিকিট অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান হওয়া দরকার।

একই অবস্থা অন্যান্য রুটের ক্ষেত্রেও। বিআরটিসির ঢাকা-ভাঙ্গা বাস সার্ভিস আগে চালু থাকলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ভাঙ্গা যেতে হলে গুণতে হচ্ছে অন্য রুটের বাসের পুরো ভাড়া।

শহীনুর রহমান নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, সারাদেশে বিআরটিসির বাস ভাড়া যতটুকু দূরত্ব যাওয়া হয় সে অনুযায়ী দিতে হয়। কিন্তু আমি গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া যেতে চাইলেও আমাকে অন্য রুটের পুরো ভাড়া দিতে হচ্ছে। এভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে মাঝপথে সিট খালি হওয়ার পর যাত্রী তুলে পকেট ভারী করছে বাস কাউন্টার-শ্রমিকদের একটি সিন্ডিকেট।

পদ্মা সেতুর টোল সংযোজন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে ঢাকা-ভাঙ্গা-ফরিদপুরের ভাড়া ২৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ফরিদপুর থেকে ঢাকার ভাড়া ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-কালনা হয়ে যশোরের রাস্তা ১৭০ কিলোমিটার হলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এ রুটে এখনও ভাড়া নির্ধারণ করেনি বিআরটিএ। বিআরটিএ যে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করছে তাতে এ রুটে ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া হয়ে খুলনার দূরত্ব ২০৭ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের ১২ রুটের যাত্রীবাহী বাসের ভাড়া ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে পরিবহন কর্তৃপক্ষ নন-এসি বাসে ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৬০০ টাকা।

সার্বিক এ অনিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ডিজিএম (অপারেশন) শুকদেব ঢালী বলেন, বিআরটিসির বিষয়ে কোনো যাত্রী বা সাংবাদিক লিখিত অথবা মৌখিক অভিযোগ জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। রুটে যে স্টপেজ পর্যন্ত যাত্রী যাবেন, সে পর্যন্তই ভাড়া নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমি সব ডিপো ম্যানেজারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮, আগস্ট ১, ২০২২
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।