ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে মাছ উৎপাদনে ঘাটতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
সিলেটে মাছ উৎপাদনে ঘাটতি

সিলেট: সিলেট জেলায় দুই হাজার ৬৯২ দশমিক ৯২০ মেট্রিক টন মাছের ঘাটতি রয়েছে।

শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরের সাগরদিঘিরপাড় মৎস্য ভবনে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

 

সভায় মৎস্য কর্মকর্তারা বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সিলেট জেলায় মোট মাছের চাহিদা ছিল ৭৮ হাজার ১২০ দশমিক ৩২২ মেট্রিক টন। পক্ষান্তরে উৎপাদন হয়েছিল ৭৫ হাজার ৪২৭ দশমিক ৪০২ মেট্টিক টন। সে হিসেবে অর্থ বছরে দুই হাজার ৬৯২ দশমিক ৯২০ মেট্রিক টন মাছের ঘাটতি রয়েছে।

তারা বলেন, সিলেটে বন্যার কারণে মৎস্য খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এক থেকে দুই বছর লাভ করলেও তিন বছরের সময় বন্যায় লাভ-আসল সব হারিয়ে ফেলেন। ফলে খামার করতে নিরুৎসাহিত হন উদ্যোক্তারা। তাই এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের প্রণোদনা তথা স্বল্পমূল্যে ঋণ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।  

মৎস্য কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদে অনন্য হাওর বেষ্টিত সিলেট অঞ্চল। অন্যান্য জেলাগুলোতে যেখানে পুকুরে চাষ করা মাছের আধিক্য বেশি, সেখানে এই জেলার হাট-বাজারে হাওরের মাছের সুস্পষ্ট আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। এ জেলায় মোট মাছ উৎপাদনের ৩১ শতাংশ চাষ করা ও ৬৯ শতাংশ হাওর ও বিলের।  

তবে জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, ফসলের মাঠে অবাদে কীটনাশক ব্যবহার, জনসংখ্যা বাড়ার ফলে মাছের অতি আহরণ, মৎস্য আইন না মেনে প্রজনন মৌসুমে কোনো বেড় জাল, মশারি জাল, কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, জলাশয় সম্পূর্ণ সেচে মাছ ধরায় হাওরে মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে এবারো ২৩ জুন থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।  

হাওর ও বিলের উৎপাদন ধরে রাখা এবং পুকুরে উৎপাদন বাড়াতে অংশগ্রহণমূলক মনোযোগই এ অঞ্চলের মৎস্য উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা সফলে ২০৩০ সালে ৬৫ লাখ টন এবং ২০৪১ সালে ৮৫ লাখ টন মাছ উৎপাদন করে মৎস্যখাত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বলিষ্ট ভূমিকা রাখবে মনে করেন বক্তারা।

সভায় বক্তারা বলেন, সরকারের পক্ষে মৎস্য বিভাগ বিল, নার্সারি স্থাপন, পোনা অবমুক্তি, প্রদর্শনী-কামার স্থাপন, প্রশিক্ষণ দেওয়া, পরামর্শ দেওয়া, পুকুরের পানি পরীক্ষা, মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ প্রাপ্তিতে সহায়তাকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে জনবল কম থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। একজন কর্মকর্তা দিয়ে তিন থেকে চারটা উপজেলা চালাতে হয়। সিলেটের বাইরের যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসেন, তারা কোনো না কোনো ভাবে তদবির করে চলে যান। তাই সিলেটের কোটায় জনবল প্রয়োজন। আর কীটনাশক ব্যবহারে প্রকৃতিগতভাবে মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার কমাতে পারলে মাছের প্রজনন বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া মাছের উৎপাদনে আমন চাষে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।  

বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সিলেটের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে মৎস্য চাষিদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের স্বল্প সুদে কিংবা সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন।  

সভায় বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন, বিভাগীয় সহকারী পরিচালক আল মিনান নূর।  

সভায় আলোচনায় অংশ নেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও সিলেটের ডাকের চিফ রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।