ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া সুরাইয়ার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া সুরাইয়ার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার ফাইল ফটো

বাবা বাচ্চু ভূইয়া সামান্য চা দোকানি। মা নাজমা বেগম গৃহিণী।

গ্রামের বাড়িতে টিনের যে ছোট ঘর রয়েছে, সুরাইয়াসহ আরো দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে তাঁদের বাস। বাড়তি জায়গাজমিও নেই। ফলে চায়ের দোকানের যে আয় তা দিয়েই দুঃখ-কষ্টে চলে পুরো পরিবার।      

সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া আলোচিত শিশু সুরাইয়ার কথা। আজ তার সপ্তম জন্মদিন। ২০১৫ সালের এই দিনে মাগুরা সদর হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভে গুলিবিদ্ধ মা নাজমা বেগম জন্ম দেনকন্যাশিশু সুরাইয়াকে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে সুরাইয়াদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ঘরের দাওয়ায় বসে আছেন বাচ্চু ভূইয়া। ঘরের ভেতরে খাটে শুয়ে সুরাইয়া। একা চলাফেরা করতে পারে না। দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ। মা নাজমা বেগমের সহায়তায় তাকে একটি চেয়ারে বসানো হলো। নাম ধরে ডাকলে সাড়া পাওয়া গেল না। নাজমা বেগম জানান, গর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে সুরাইয়ার একটি পা এবং একটি চোখ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে একা চলাফেরা করতে পারে না। আর নাম ধরে ডাকলে কিংবা কিছু জিজ্ঞেস করলে বেশির ভাগ সময় চুপ করে থাকে। সাড়া মেলে না। সব মিলিয়ে ভালো নেই সুরাইয়া।

কথার রেশ ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূইয়া বলেন, ‘কী আর বলব! সুরাইয়ার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আর ভালো হবে না। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক। ’

ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তার মামুনুর রশীদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চলছে বর্তমানে সুরাইয়ার বাঁ চোখের চিকিৎসা। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে সেখানে সুরাইয়ার চোখ পরীক্ষা করা হয়।

হতাশ কণ্ঠে বাচ্চু ভূইয়া বলেন, ‘চিকিৎসক জানিয়েছেন বেশ ঝুঁকিতে থাকা বাঁ চোখের নিয়মিত পরীক্ষার পাশাপাশি অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আর ঢাকার সিআরপিতে চলছে ওর পায়ের চিকিৎসা। সর্বশেষ গত ২০ জুন সেখানে তাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই এখানে গিয়ে থেরাপি নিতে হয়। আগামী ২৫ জুলাই আবার যেতে হবে। ’
এবার সুরাইয়ার জন্মদিন করবেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাচ্চু ভূইয়া বলেন, ‘আর পারছি না! প্রতি মাসে তাকে ঢাকার সাভারে সিআরপিতে নিয়ে যেতে হয়। প্রতিবার সেখানে যাতায়াতসহ পাঁচ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়। ছোট্ট চা দোকানের আয় থেকে খরচের এই জোগান দিতে আমি হিমশিম খাচ্ছি। প্রায়ই ধারদেনা করতে হচ্ছে। আয়োজন করে এখন আর সুরাইয়ার জন্মদিন করা সম্ভব নয়। ওর জন্য নতুন জামাও কিনতে পারিনি এবার। পুরনো জামাতেই এবার ওর জন্মদিন যাবে। ’

সুরাইয়ার চোখের বিষয়ে ডাক্তার মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রোগী দেখতে হয়। অনেক কিছু কাগজপত্র না দেখে বলা যায় না। সুরাইয়াকে আবার সরাসরি না দেখে তার চোখের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে না। ’
সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমার মেয়ে আজও বেঁচে আছে। তবে বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সুরাইয়ার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। নিয়মিত চিকিৎসা না করালে বাঁ চোখটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ও ভালো করে হাঁটতেও পারে না। প্রতি মাসে সিআরপিতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। বারবার মানুষের কাছে সহযোগিতা চাইতে আর ভালো লাগে না। সরকার যদি কোনো সংস্থার মাধ্যমে সুরাইয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা করে দিত তাহলে বড় শান্তি পেতাম। ’ 

অন্যদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় এখনো শেষ হয়নি এসংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ। বাচ্চু ভূইয়া জানান, ঘটনার দিন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তাঁর চাচা মোমিন ভূইয়া। এই মামলায় সব আসামি বর্তমানে জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন পার হলেও মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।

মামলার বিষয়ে মাগুরার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস্কেন্দার আজম বাবলু বলেন, ‘বিচারক পদ শূন্য থাকাসহ করোনার কারণে মামলার কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। এখন সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে দ্রুতই বিচারকাজ শেষ করা হবে। ’
২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোমিন ভূইয়া নিহত হন। আর গর্ভের সন্তানসহ গুলিবিদ্ধ হন নাজমা বেগম। পরে মাগুরা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয় সুরাইয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।