ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভিক্ষাবৃত্তি আর দস্যুতার জীবন পেরিয়ে ঘর পেলেন নাছিমা-হান্নান

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
ভিক্ষাবৃত্তি আর দস্যুতার জীবন পেরিয়ে ঘর পেলেন নাছিমা-হান্নান

লক্ষ্মীপুর থেকে: নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি সব চলে যায়। ছেড়ে যায় স্বামীও।

তারপর সন্তানদের নিয়ে শুরু হয় সংগ্রামের জীবন। জীবিকার জন্য লক্ষ্মীপুরের নাসিমা আক্তার বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তির পেশা। সে পেশায় ছিল লাঞ্ছনা, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। তবে সেই দিন এখন কেটে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে নাসিমা এখন স্বপ্ন দেখছেন সুন্দর দিনের।

নাসিমা আক্তারের ভাষায়, ১২ বছর আগে নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি সব চলে যায়। সে সময় আমার স্বামী আমাকে রেখে চলে যায়। দুটি মেয়েকে নিয়ে আমি বড় অসহায় ছিলাম। মানুষের দরজায় দরজায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। মা হয়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ভিক্ষা করেছি। অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়ে সন্তান লালন-পালন করেছি। এমন কোনো লোক ছিল না যে আমাকে একটু ছায়া দেবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। এজন্যই এখন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তার। ছোট্ট ঘরটিতে একটি সেলাই মেশিন চালিয়ে সন্তানদের খাওয়া, পরা ও লেখাপড়া করাচ্ছি। '

প্রায় একই অবস্থা সুন্দরবনের দস্যু আব্দুল হান্নানের। নয় ভাই-বোনের সংসারে উপায়অন্ত না পেয়ে যুক্ত হন জলদস্যুতায়। এরপর পেশাগত কারণে বাড়ি-ঘর তো দূরের কথা, এলাকায় ঢুকতেও সাহস পেতেন না তিনি। এবার দিন ঘুরেছে তারও। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে হান্নান এখন স্বপ্ন দেখছেন সৎ উপার্জনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার, দেশের একজন সুনাগরিক হওয়ার।

আব্দুল হান্নানের ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমি হান্নান সর্দার, বাউল বাবার ছেলে। নয় ভাই-বোনের সংসারে উপায়অন্ত না পেয়ে জলদস্যুতায় যুক্ত হই। মানুষের জীবন যে কত কষ্টের হতে পারে, আমি হান্নান তার প্রমাণ। পানিতে কুমির আর ডাঙায় বাঘ- এর মধ্য দিয়ে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত খেয়ে না খেয়ে সুন্দরবনে জীবন কাটিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন, সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবনযাপনের সুযোগ দিয়েছেন। বাড়ি-ঘর তো দূরের কথা, এলাকায় ঢুকতে পারবো, এটাও কখনো কল্পনা করিনি। আজ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরের চাবি হাতে পেয়েছি। আমি এখন দিন মজুরের কাজ করি, ভবিষ্যতে ব্যবসা করতে চাই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমি এদেশের একজন সুনাগরিক হতে চাই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য জমি ও গৃহ প্রদান’ কর্মসূচির আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবার। এদের মধ্যে নাসিমা আক্তার এবং আব্দুল হান্নানও রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর হস্তান্তর করেন।

এ সময় দুটি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের এ কার্যক্রমের ফলে পঞ্চগড় এবং মাগুরা জেলায় আর কোনো গৃহহীন-ভূমিহীন নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।