ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নির্বাচনী প্রচারে মেগা প্রকল্পের সফলতা তুলে ধরাকে প্রাধান্য দেবে আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
নির্বাচনী প্রচারে মেগা প্রকল্পের সফলতা তুলে ধরাকে প্রাধান্য দেবে আ.লীগ

ঢাকা : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের মেগা প্রকল্পের সফলতাগুলো তুলে ধরাকেই প্রাধান্য দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে অধিক শিল্পায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যুগান্তকারী অধ্যায় সূচনা করেছে। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং যেগুলো বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি প্রকল্পই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ প্রকল্পগুলো।

সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের ইতিহাসে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১  জেলাকে রাজধানীসহ দেশের বাকি অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত করেছে এই সেতু ৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জন্য সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করবে বলে দলেটির নীতি নির্ধারকরা জানান। আগামী নির্বাচনের প্রচারে পদ্মা সেতু প্রাধান্য পাবে এবং ভোটের অংকে আওয়ামী লীগের অনুকূলে বিরাট প্রভাব ফেলবে বলেও তারা জানান।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প (১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার) নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দুই ইউনিট বিশিষ্ট দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১’র নির্মাণ কাজ আগামী বছর ২০২৩ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থাৎ, আগামী নির্বাচনের আগেই এই ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে পরের বছর ২০২৪ সালে। এই প্রকল্পটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, এর মাধ্যমে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিশ্বের মাত্র ৩২ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আর এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতির ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত হতে চলেছে ঢাকার মেট্রো রেল । উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রথম পর্বের অংশ উত্তরা টু আগারগাঁও এ বছর ডিসেম্বরে চালু হবে। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ আগামী বছর ডিসেম্বরে চালু হবে। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগেই যানজটের চরম ভোগান্তির শিকার রাজধানীর মানুষ মেট্রোরেলে মাত্র ৩৬ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল চলাচলের সুবিধা পাবে। এছাড়া রাজধানীতে মেট্রো রেলের আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

সরকারের আরেকটি মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল। নদীর তলদেশ দিয়ে ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এটিই দেশের প্রথম পানির নিচের পথ। চলতি বছর বঙ্গবন্ধু টানেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময় নির্মিত হয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দর নামে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর। পটুয়াখালী জেলায় নির্মিত পায়রা সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে এবং সম্প্রচার মাধ্যমের অত্যাধুনিক সুবিধা দিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ভূমিকা রেখে চলেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণেরও প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া রাজধানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালসহ বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলোকেই নির্বাচনী প্রচারে প্রাধান্য দিয়ে এর সফলতা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এর জন্য দেশে অধিক শিল্পায়নের প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্বাচনী প্রচারে তুলে ধরা হবে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সরকার গত ১৪ বছরে যে বিরাট উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়েছে তার মধ্য দিয়ে একটা বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। এটা বলতেই হবে। নির্বাচনী প্রচারে এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া দেশের মানুষও নিশ্চয়ই এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করবে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে যে বড় বড় উন্নয়ন কাজ হয়েছে সেগুলো তো দেশের মানুষের জন্যই করা হয়েছে। এদেশের মানুষই তো এর সুবিধাগুলো পাবেন। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য এর পাশাপাশি ব্যাপক শিল্পায়নের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের এ সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেটা তো অভাবনীয়। পদ্মা সেতুর সফলতা আছে, এছাড়া তো আরও অনেক সফলতা রয়েছে। এগুলোতো দৃশ্যমান, এর সুফলগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। আমরা অতীতে কি করেছি এ কার্যক্রমগুলো নিয়েই আগামী নির্বাচনী প্রচারে মানুষের কাছে যাব। নিশ্চয়ই মানুষ এগুলোকে মূল্যায়ন করবেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও বিজয়ী করবেন।

বাংলাদেশ সময় : ২৩৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।