ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা বানালাম মোরা আর টাকা নিলো মেম্বার’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
‘স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা বানালাম মোরা আর টাকা নিলো মেম্বার’

পিরোজপুর: ‘স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা বানালাম মোরা। আর হের টাকা নিলো মেম্বার’।

  কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী গ্রামের সুশীল ঢালী (৬০)।

তিনি বলেন, ‘মোগো বাড়ির সামনের মাটির সরু রাস্তাটা ভাঙা ছিলো। ফলে চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হইতেছিল। তাই গত বছরের নভেম্বর মাসে (তৃতীয় ধাপ) অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে ওই ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী লিটন হাওলাদার এলাকায় ভোট চাইতে আসেন। তখন এলাকার সবাই রাস্তা ঠিক করার দাবি জানাই। রাস্তা ঠিক করতে তখন লিটন মোগো ১২ হাজার টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে বালু কিনে মোরা স্থানীয় প্রায় ২৫ জন নারী-পুরুষ মিলে ৪০ দিন কষ্ট করে ওই রাস্তা মেরামত করি’।   

তিনি জানান, গত প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় সংরক্ষিত (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য শিলা শিকদারকে  প্রকল্পের চেয়ারম্যান দেখিয়ে ওই রাস্তায় একটি সাইনবোর্ড টানানো হয় ও রাস্তার টাকা তোলা হয়। নাজিরপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসীর তৈরি রাস্তার কাজ দেখিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

ওই রাস্তায় স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া স্থানীয় মনিকা সমদ্দার (৩০) জানান, তিনিসহ অনেক নারী ওই রাস্তায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন।  

অভিযোগ উঠেছে, ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৃথক দু’টি রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হলেও স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিলা শিকদার টিআর প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন।  

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী গ্রামের  তোফাজ্জেল হোসেন শেখের বাড়ির পাশের একটি সুপারি গাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। এতে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের সাধারণ টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ বাবদ ‘২৯/২১-২২’ এর জীবগ্রাম সুখরঞ্জন এদবরের বাড়ি থেকে উত্তম মিস্ত্রির বাড়ি পর্যন্ত এবং দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী তোফাজ্জেল শেখের বাড়ি থেকে সুদেব ঢালীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৮ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়।

ওই ওয়ার্ডের জীবগ্রামের নারায়ণ হালদার জানান, নিরাপদ হালদারের বাড়ির পেছনের রাস্তাটি ভাঙা, বর্ষাকালে কাঁদা হয়ে যায়। তাই নির্বাচনের আগে আমরা গ্রামবাসী মিলে সাত-আটদিন স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে রাস্তার দু’পাশ উঁচু করি। পরে স্থানীয় মেম্বার প্রার্থী হাসান  তাতে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে দেন।  

এ ব্যাপারে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যন (সিপিসি) স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদার জানান, তিনি ওই ওয়ার্ডের নতুন মেম্বার। স্থানীয় মেম্বার লিটন হালদার (লিটু) তাকে ওই কাজের সিপিসি করেছেন মাত্র।  

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য লিটন হালদারের জানান, তাদের তেমন কোনো আয় নেই। তাই ওই প্রকল্পটি দেখিয়ে তোলা টাকা ইউনিয়নের মেম্বাররা খরচ হিসেবে ভাগ করে নিয়েছেন।  

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন বেপারী জানান, ওই ওয়ার্ডের নারী মেম্বার ও সাধারণ   মেম্বার মিলে রাস্তাটি ‘টিআর’ এর আওতায় প্রকল্প দিতে অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। দুই-চারদিন ধরে শুনছি যে ওই রাস্তা দু’টি এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে করেছেন।  

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. এস্রাফিল হোসেন জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।