ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার প্রমাণ পদ্মা সেতু

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার প্রমাণ পদ্মা সেতু

ঢাকা: জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনেক বাধা, ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। আগামী ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুরুতেই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পরে এই মেগা প্রকল্পটি। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দৃঢ়তার ফলে দেশে দীর্ঘতম এই সেতু আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

এই সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরুতেই যেমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তেমনি পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন ঠেকাতে দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে। সব ষড়যন্ত্র ও বাধা মোকাবিলা করে আর এক মাস পরে উদ্বোধন হতে যাওয়া এই সেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দিরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপনা। যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

এই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক অর্থ দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। যদিও পরবর্তীতে কানাডার আদালত বিশ্বব্যাংকের এই দুর্নীতির অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পেয়ে অভিযোগটি খারিজ করে দেয়। এরপর বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে। এই সেতু নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা।

দেশের প্রধান নদী পদ্মার ওপর নির্মিত এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ প্রায় ৯ কিলোমিটার। এই পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টির জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। দুইতলা বিশিষ্ট এই সেতুর ওপরের অংশে সড়ক পরিবহন এবং নিচের অংশে রেল চলাচল করবে।

এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা জানান, শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও অদম্য সাহসিকতার ফলে যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তেমনি নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার মাধ্যমে বিদেশি নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে কোনো কাজ করা সম্ভব সেটাও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে। যারা মনে করেন বিদেশিদের ছাড়া চলে না নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে শেখ হাসিনা তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা ও মন্ত্রীরা আরও জানান, শেখ হাসিনা শুধু সাহসিকতার সঙ্গে এত বড় সাফল্য অর্জনই করেননি তার নামে এই সেতুর নামকরণের প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে অনেক বড় উদারতাও দেখিয়েছেন। বিভিন্ন দিক থেকে দাবি উঠেছিল এই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করার। আর যিনি এত বড় ঝুঁকি নিয়ে সে সেতু নির্মাণ করলেন সেটি তার নামে নামকরণ অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে তার নাম প্রস্তাব করে যে সামারি নিয়ে গিয়েছিলেন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে সামারিতে প্রধানমন্ত্রী সই করেননি।  

ওবায়দুল কাদের পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বলেছেন পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে।

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অদম্য সাহসিকতা, জনগণের কাছে করা প্রতিজ্ঞা, নিষ্কলুষতা আর নিজস্ব অর্থায়নে শেখ হাসিনার হাত দিয়ে এই পদ্মা সেতু নির্মিত হলো। আর এর জন্য দেশের জনগণকে বাড়তি কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। যারা দেশের স্বার্থের চেয়ে বিদেশিদের স্বার্থ বড় করে দেখে এবং বিদেশিদের ছাড়া চলে না বলে মনে করে তাদেরকে শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন, প্রমাণ করলেন জনগণের সমর্থন থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়। তিনি চেয়েছেন, পদ্মা সেতু করেছেন এই হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি সেতুটি নির্মাণ করলেন সেটি স্বাভাবিকভাবেই তার নামে নামকরণ হতে পারতো। কিন্তু তিনি কাজ করেন দেশের জন্য মানুষের জন্য, এ কারণে শেখ হাসিনা এই লোভটাকে প্রশ্রয় দেননি।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫০ বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপনা পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু দেশের প্রত্যেকটি মানুষের অনুভূতির নাম আর তা বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি দেশের মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারেন তিনিই রাষ্ট্রনায়ক। আগামী ২৫ জন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে, এটা শুধু উদ্বোধন না এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে দেখানো হবে শেখ হাসিনা যা বলেন সেটা করেন। সেতুর কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই কিছু দুষ্কৃতিকারী, ড. ইউনুস, খালেদা জিয়া এই সেতু যাতে না হয় তার ষড়যন্ত্রের করেছিলেন। সারা দুনিয়া জেনেছে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, বাধাকে শেখ হাসিনা জয় করতে পেরেছেন। যেহেতু সারা দুনিয়া পদ্মা সেতু নামে এই ষড়যন্ত্রের কথা জেনেছে তাই হয় তো তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সেতুর নাম পদ্মা সেতুই থাকবে।

বাংলাদেশ সময় ০৯৩৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।