ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিএটিবি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
বিএটিবি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের আহ্বান

ঢাকা: নীতিগত সুবিধার নামে বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে বাড়তি আদায় করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ (বিএটিবি)। প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণার বিপরীতে এ কোম্পানিতে শেয়ার ও উচ্চপদস্থ সরকারি শেয়ার তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে দ্বিমুখী অবস্থান বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ মে ২০২২) ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটি’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) আয়োজনে ‘কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাক কোম্পানি থেকে শেয়ার প্রত্যাহারে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ মন্তব্য করেন বক্তারা।

মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক ও দি ইউনিয়ন’র কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা।

প্রবন্ধে সুশান্ত সিনহা বলেন, মানুষের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তর সিগারেট ব্যবহারকারী দেশ। বাংলাদেশ তামাক কোম্পানিগুলোর উর্বর ব্যবসা ক্ষেত্র। দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৯ কোটি ৭০ লাখ সিগারেট বিক্রি হয়। দেশে সিগারেটের উৎপাদন না বাড়লেও বিএটিবির মুনাফা বাড়ছে। করোনাভাইরাসের সময় মুনাফা বেড়েছে ৫ গুণ! তামাক কোম্পানি সরকারকে যে রাজস্ব দেয় তার কতটা জনগণ দেয় আর কতটা কোম্পানি দেয় তা পরিষ্কার নয়।

সামান্য শেয়ারের সুযোগ নিয়ে সরকারের ৬ জন কর্মকর্তাকে বিএটির বোর্ড অব ডিরেক্টরিতে যুক্ত করা হয়েছে। তারা ব্যক্তি-স্বার্থে বছরের পর বছর সেখানে থেকেই যাচ্ছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা একটি অপকৌশল। যার মাধ্যমে তামাক কোম্পানি সরকারি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপসমূহ নিজেদের পক্ষে নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণে ১১ ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। তার মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমে (সিএসআর) সবচাইতে বেশি প্রভাব বিস্তার করে বলে মন্তব্য করেন সুশান্ত সিনহা।

আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা তামাক কোম্পানির মতো প্রাণঘাতী পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে প্রতিনিধিত্ব করা উচিত নয়। নৈতিকতার দিক থেকে যা সাংঘর্ষিক। কিসের স্বার্থে তামাক কোম্পানিতে সরকারের কর্মকর্তাদের এই প্রতিনিধিত্ব; তা পুনরায় বিবেচনা করতে হবে। পাবলিক পরিবহন, প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে। কম বয়সীদের কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্ত তা কাগজে কলমে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা, একটি রাষ্ট্রীয় ঘোষণা। কিন্ত তা বাস্তবায়নে এখনো কোনো রোডম্যাপ নেই। উপরন্তু, তামাক কোম্পানিতে শেয়ার রাখা বিরাট স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বিএটিবি থেকে সরকারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা জরুরি।

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, তামাক ব্যবহারকারী ও আশেপাশে সকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্যান্সারসহ জটিল ও ব্যয়বহুল অনেক রোগের প্রধান কারণ তামাক সেবন। তামাক কোম্পানি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নয় যেখানে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়তে হলে তামাকের নতুন ভোক্তা তৈরি করা যাবে না। যারা ভোক্তা তাদেরকে আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, তামাকের ব্যবসায় সরকারের অংশীদারিত্বের বিষয়টি সরকারের দ্বৈতনীতি। সরকার প্রধান যেখানে তামাকের বিরুদ্ধে সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তামাক কোম্পানির পক্ষে কাজ করা উচিত নয়। শস্যের মধ্যে ভূত থাকায় দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।

উন্মুক্ত পর্বে বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস’র কান্ট্রি ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন শেখ, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল প্রমুখ।

সভায় ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এইড ফাউন্ডেশন, বিইউএইচএস, ডব্লিউ-বিবি ট্রাস্ট, সিএলপিএ ট্রাস্ট, টিসিআরসি, ডাস, নাটাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ২৪ মে, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।