ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেমের টানে খুলনায় এসে চরম অর্থকষ্টে অস্ট্রেলীয় চিত্রশিল্পী

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
প্রেমের টানে খুলনায় এসে চরম অর্থকষ্টে অস্ট্রেলীয় চিত্রশিল্পী

খুলনা: ভালোবাসার জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংস হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে আছে। মৃত্যুকে মাথা পেতে নিয়েছেন অনেকেই।

রাজরক্তের বাইরের মানুষকে ভালোবেসে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার নজিরও কম নেই। আবার অনেকে হয়েছেন দেশান্তরি। তেমনি একজন ম্যালকম আর্নল্ড (৭৪)। প্রেমের টানে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে খুলনায় এসে ঘর বেধেছেন তিনি।

পৃথিবীর শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। সমৃদ্ধ অর্থনীতি, সামগ্রিক নিরাপত্তা, অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে বসবাসের জন্য চমৎকার একটি দেশ। সেই দেশ ফেলে রামপালের পেরিখালীর স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র নারী হালিমাকে বিয়ে করে ভালোই কাটছিল ম্যালকমের দিনকাল। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে মানবেতর পরিস্থিতির মুখোমুখি এই দম্পত্তি।

সোনাডাঙ্গা ১ নম্বর আবাসিকের ৬ নম্বর রোডে অস্ট্রেলীয় স্বামীকে নিয়ে থাকেন হালিমা।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর ছোট মেয়েকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের হয়ে কাজ করছিলাম। ২০০১ সালে ম্যালকম মোংলায় এলে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ নিয়ে বই লিখতে এসেছিলেন তিনি। তখন তার সঙ্গে আমার ২৫ মিনিট কথা হয়। তারপর উনি চলে যান। আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে ২০০৩ সালে চিঠি পাঠালে তিনি এসে আমার চিকিৎসা করান।

বাঁয়ে ম্যালকমের আঁকা ছবি, ডানে ম্যালকম-হালিমা দম্পত্তির বিয়ের ছবি

হালিমা বলেন, উনি সবকিছু জেনে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তখন তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলি। তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। আমাদের বিয়ে হয় ২০০৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে উনি আমার জন্যে বাংলাদেশে আছেন।

হালিমা জানান, ম্যালকম একজন আর্টিষ্ট। ছবি আঁকেন। এটাই তার পেশা। তবে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। আর তার আঁকা ছবিও কেউ কেনে না। সব মিলিয়ে করোনাকাল থেকে বেশ অসুবিধায় আছে এই দম্পত্তি।

হালিমা বলেন, আমরা এখন ঠিক মতো ঘর ভাড়া দিতে পারি না। কেউ যদি দেয় তাহলে দিতে পারি। প্রতি মাসে উনার ৬-৭ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ডাক্তার বলেছেন, উনাকে প্রতিদিন ছয় বেলা খাবার দিতে। ডিম, দুধ ও ফল খাওয়াতে বলেছেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে আমি উনাকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারি না। দুজন মানুষের অনেক খরচ রয়েছে।

ম্যালকমের আঁকা কয়েকটি ছবি।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে হালিমা বলেন, ম্যালকম অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সেখানে তার কোনো সম্পত্তি নেই। আমি অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বাসিতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে লোন নিয়ে ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়েছে। আমার স্বামী অসুস্থ। তার যদি কিছু হয়ে যায় আমি কীভাবে লোন শোধ করবো?

বাংলাদেশ নিয়ে ম্যালকমের লেখা বইয়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হালিমা বলেন, বিয়ের পর ম্যালকম তার কাঙ্ক্ষিত বইয়ের কাজ শেষ করেন। প্রকাশের জন্য ঢাকার একটি পাবলিকেশনে বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া হয়। তবে বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। ম্যালকম অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চান কিনা জানতে চাইলে হালিমা বলেন, তিনি যেতে চান না। আমার সঙ্গেই থাকতে চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যালকম আর্নল্ড বাংলানিউজকে বলেন, স্ত্রী হালিমাই এখন আমার সব। সে আমার সেবা করছে। আমার অনেক শারীরিক জটিলতা রয়েছে। হাঁটতে ও বসতে কষ্ট হয়। আমি ভীষণ অসুস্থ, মানবেতর জীবন যাপন করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
এমআরএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।