রাজবাড়ী: বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে একটি বিলুপ্ত শিল্প তাঁত শিল্প। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে তাঁতের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।
রাজবাড়ী জেলার অনেক জায়গায় কিছুদিন আগেও তাঁতের খটখটানি আওয়াজ পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁত কারিগরদের কর্মব্যস্ততা। ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার লুমের কাছে পেরে উঠছে না হ্যান্ড লুম।
রাজবাড়ী জেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের আকবার মুন্সি বাংলানিউজকে জানান, আগে ১৫টা জাপানি হ্যান্ডলুম মেশিন ছিল ক্রমাগত লোকসান খেতে খেতে এখন পাঁচটা আছে। তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। কারণ সুতাসহ তাঁত শিল্পের সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি। লাভ না থাকায় এ পেশায় নতুন করে আসতে চায়না এখন। এ কারণে তাঁত শিল্প বিলুপ্তির পথে। এক সময় শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ী তাঁত শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল।
এ শিল্পের উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ নানা পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব। তবে এ শিল্পে সুতাসহ উপকরণের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে তাঁত শিল্প মালিকদের। এ কারণে জেলার অধিকাংশ তাঁত শিল্প বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কারখানা মালিক এই শিল্পকে বন্ধ করে বিকল্প কোনো ব্যবসা বেছে নিচ্ছেন।
তাঁত কারখানার শ্রমিক জয়নাল ফকির বাংলানিউজকে জানান, অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে তাঁত কারখানায় কাজ করি। এখন তাঁতের কাপড়ের বাজারের যে অবস্থা তাঁতে মহাজনরা লোকসান দিয়ে বেচাকেনা করে আমাদের মজুরি দেয়। এভাবে কতোদিন লোকসান দেবে মহাজনরা? ঠিক মতো বেচাকেনা না থাকলে আমাদের মজুরি দিতে পারবে না। আর মজুরি না পাইলে আমাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
রাজবাড়ী শহর থেকে কাপড় কিনতে আসা স্থানীয় বেপারী আব্দুুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, তাঁত শিল্পের সরকার যদি সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে আমাদের মহাজন/তাঁত শিল্প মালিকদের ক্রয়-বিক্রয় ভালো হবে। তা না হলে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
মদাপুরের তাঁত মালিকরা জানান, সুতাসহ উপকরণের মূল্য নির্ধারণ করে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিলে এ শিল্প সচল করা সম্ভব হবে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি- সুতাসহ উৎপাদনের উপকরণের দাম নির্ধারণ করে আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা করুন, নতুবা একদিন আমাদের এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর শিল্প ককর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক শিল্প বিপ্লবের কারণেই এসব হ্যান্ড লুম শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়ছে। ইলেক্টিক মেশিন যেখানে সারাদিনে ৫০০ গামছা তৈরি করতে পারে সেখানে এসব হাতের তৈরি মেশিন ১০টাও উৎপাদন করতে পারে না। তাছাড়া সুতার দাম বাড়াতে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে তারা যদি মনে করি তাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং লোনের ব্যাপারে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এনটি