ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে সেবার মান! 

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে সেবার মান! 

ময়মনসিংহ: পাসপোর্ট সেবা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রায় বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থীর। দালাল-হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় যেন পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা চিত্র।

তবে বর্তমানে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিত্র অনেকটা ভিন্ন।  

ফলে এখন পাসপোর্ট করতে এসে কেউ বিরক্তি নিয়ে ফিরে যান না বলে জানিয়েছেন সেবা প্রার্থী জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আলী, সোহরাব হোসেনসহ আরও অনেকেই।

কারণ হিসেবে তারা জানান, পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তি হলেই তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। আর তখনই সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণের পর ডিজিটাল ক্লিকে তাৎক্ষণিক মিলছে সেবা। এর ফলে কমেছে ভোগান্তি।    

এদিকে কর্মকর্তাদের এই সেবা মনোভাবের কারণে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট পেয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার আবেদনকারী। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব অর্জন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।          

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে বদলাতে শুরু করেছে পাসপোর্ট অফিসের চির চেনা সেই চিত্র। বাড়ানো হয়েছে সেবা ডেক্স, বিদেশগামী অসুস্থ রোগীদের জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ সেবা ‘মোবাইল এনরোলমেন্ট ইউনিট। ’ ফলে এ বিশেষ ইউনিটের মাধ্যমে কোনো ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই রোগীদের পাসপোর্ট মিলছে অতি অল্প সময়ে।    

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত জনবল অপরিহার্য বিষয় হলেও বর্তমানে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ১২ জন। যা সেবা প্রার্থীদের আনুপাতিক হারে মোট চাহিদার অর্ধেকেরও কম।      

পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, পাসপোর্ট ভবনের সামনে বড় পরিসরে সেবাপ্রার্থীদের জন্য ঝোলানো রয়েছে বিশেষ বার্তা। এতে লেখা রয়েছে ‘আপনার পাশে আমরা। পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হলে ২০৬ নম্বর কক্ষে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অনুরোধক্রমে- উপ-পরিচলক। ’    

ফলে প্রতিদিন নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে এই কর্মকর্তার কক্ষে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় শতাধিক সেবাপ্রার্থী সেবা নিচ্ছেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।  

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নাওভাঙ্গা গ্রামের মোশারফ হোসেন ও একই উপজেলার সোহেল মিয়া বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এতে উপকৃত হচ্ছেন আমাদের মত আরও অনেক আবেদনকারী।  

অফিস সূত্র জানায়, করোনাকালী দুর্যোগ কাটিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি আবেদন জমা পড়ছে। আগে এসব আবেদনের বেশির ভাগ দালাল মধ্যস্থতায় জমা হলেও এখন আবেদনকারীরা নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে তা জমা দিতে পারছেন। এতে কমেছে দালালদের দৌরাত্ম্য।    

তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) তথ্যগত ভুলের কারণে অনেক আবেদনকারী কিছুটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলেও স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলেন, এনআইডির ভুলের কারণে অনেকেই যথা সময়ে পাচ্ছে না পাসপোর্ট। সেই সঙ্গে কখনো কখনো পুলিশ ভেরিফিকেশনে দেরিতে রিপোর্ট দিলেও ঘটছে বিড়ম্বনা। যা সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ বলেও স্বীকার করেছেন তারা।

এসব বিষয়ে কথা হলে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের নিয়ে অভিযোগ অনেক, তবুও চেষ্টা করছি, সেবা দানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে। যদিও সব সময় তার পুরোপুরি সম্ভব হয় না।  

তবে আশা জাগানিয়া কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেবা দানের মনোভাব নিয়েই এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এসেছি। দালাল ও হয়রানির অভিযোগ আছে, ছিল, হয়ত থাকবেই। তবে আমি যোগদানের পর প্রতিটি কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে চেষ্টা করছি, সেবা নিতে আসা জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে। সেটা হোক সমস্যা সামাধান করে অথবা বিড়ম্বনার কারণ চিহ্নিত ও অবহিত করে বা সেবা প্রার্থীকে শান্তনা দিয়ে।    

মো. হাফিজুর রহমান আরও বলেন, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে সর্বত্রই দালালদের সিন্ডিকেট থাকে, এখানেও থাকতে পারে। তবে দালালদের অপতৎপরতা রোধে এই মধ্যে র‌্যাব-পুলিশের একাধিক অভিযানে অনেকে আটক ও সাজা হয়েছে।  

ফলে অফিস চত্বরে এখন আর দালালদের বিচরণ না থাকায় আবেদনকারীরা নিজেরাই লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দিতে পারছেন। এতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত অর্থ লেনদেনের সুযোগ বা কারণ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।