ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন শিয়াল-কুকুরের ঘরবসতি!

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন শিয়াল-কুকুরের ঘরবসতি!

নীলফামারী: বরাদ্দপ্রাপ্তরা অনেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন না। অনেকেই বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন ঘর।

কেউ কেউ আবার বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেক ঘর পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফলে রাত হলেই শিয়াল-কুকুরের বসতি হয়ে ওঠে এসব ঘর।

এমনই চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৈরি করা ঘরগুলোর।

ওই প্রকল্পটি ২০১৭ সালে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে খোর্দ্দ বোতলাগাড়ীতে আবাসনের ঘর তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ১০৯টি আধা পাকা ও টিনশেড বাড়ি। একই বছর ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুস্থদের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তবে যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বরাদ্দ পাওয়ার পর আশ্রয়ণের বাড়িতে ওঠেননি। এর মধ্যে আধা পাকা বাড়ির ১/৫ নম্বর নাসিমা বেগম, ৮/৩ নম্বর মো. বাবু, ১৫/২ নম্বর বুলবুল, ১১/১ নম্বর আব্বাছ আলী, ১১/৪ নম্বর ছকিনা বেগম এবং টিনশেড বাড়ির ২১ নম্বর হোসনে আরা ঢেপো, ৬ নম্বর আছিউল, ৭ নম্বর হাকিম, ১৯ নম্বর সেকেন্দার আলী ও ২৩ নম্বর মঞ্জু আরার নামে বরাদ্দ হয়। কিন্তু তারা নিজেরা না থেকে ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছেন।  

অন্যদিকে যেসব বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- নূর ইসলামের নম্বর ৭/৩ বাড়ি, আকলিমা নম্বর ১২/৫, জাহিদুল ইসলাম নম্বর ৩/৫ ও খলিল নম্বর ৯/২। অভিযোগ রয়েছে, যারা সচ্ছল এবং জমিও আছে, তাদের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েকজন বাংলানিউজকে জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে অনেকে থাকেন না। বরাদ্দপ্রাপ্তরাই ঘর ভাড়া দিয়ে আয় করছেন। ফলে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এখানে চলে আসায় পরিবেশেও প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ সমাজবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। আবার দীর্ঘদিন কয়েকটি ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে সেগুলো।  এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে ঘরগুলো, অন্যদিকে ম্লান হচ্ছে সরকারের সদিচ্ছা।   

বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন মোবারক হোসেন (৪২)। তিনি জানান, তার বাড়ি দিনাজপুরের রানীবন্দরে। দিনগত রাত পর্যন্ত সৈয়দপুর শহরে তিনি প্যাডেলচালিত রিকশা চালান। প্রতিদিন বাড়িতে যাতায়াতে তার সমস্যা হতো। আশ্রয়ণে স্বল্প টাকায় ঘর ভাড়া পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন সেখানেই থাকছেন।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান জুন বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে যারা থাকছেন না, ভাড়া দিয়েছেন কিংবা বিক্রি করেছেন, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এরপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকা, ভাড়া কিংবা বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন, তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।