ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অটিস্টিকদের সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২২
অটিস্টিকদের সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান

ঢাকা: অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্নসহ সব বিশেষ শিশুকে সমাজের মূল ধারায় এনে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২ এপ্রিল) ‘১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) তিনি এ আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, অটিজমটা আছে কিনা খুব এটা শুরুতেই যদি চিহ্নিত করা যায় তাহলে তাদের উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে বা তাদের সঙ্গে সেভাবে ব্যবহার করে অনেকটা সুস্থ করে তোলা যায়। এ চেষ্টা আমাদের রয়েছে।  

অটিজম বৈশিষ্টসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিশ্বখ্যাত বেটোফেন (জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ লুডভিগ ফন বেটোফেনের), আমরা এলিয়টের (বিশ্ববিখ্যাত কবি ও লেখক টি এস এলিয়ট) কথা বলি অথবা আইনস্টাইনের (বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন) কথা বললেই বা স্টিফেন হকিং (ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং) যার কথা আমরা বলি প্রত্যেকের মধ্যেই কিন্তু এ ধরনের একটা অটিজমের সমস্যাটা ছিল। তারা কিন্তু সমাজে এমন কিছু দিয়ে গেছে। কোনোদিন কেউ এটা চিন্তাই করতে পারেনি তাদের ভেতরে এ ধরনের সমস্যা ছিল।  

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে সঠিক পরিচর্যা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এদের ভেতরে একটা সুপ্ত প্রতিভা লুকায়িত আছে। সেটাকে বের করে নিয়ে এসে আমাদের সমাজে কাজে লাগাতে পারলে বা তাদের এ মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে পারলে তাদের জীবনটাও সুন্দর হবে। আবার বাবা-মায়ের জন্যও আর এদের কেউ বোঝা মনে করবে না। এজন্যই আমাদের সব সময় চেষ্টা এরা যেন সঠিক পরিচর্যা পায়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং আমাদের নানামুখী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন ব্যক্তিদের জাতীয় জীবনে মূল ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব এটা আমি বিশ্বাস করি। ’

অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুদের আপন করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে এটা কোনো রোগ না। এক সময় ছিল শিশু যদি প্রতিবন্ধী হতো বা অটিজম হতো মানুষ তাকে লুকিয়ে রাখতো, পরিবার লুকিয়ে রাখতো, সামনে বলতে লজ্জা পেতো। তাদের সামনে আনলে অনেকে দেখে হয়তো এটা নিয়ে প্রশ্ন করতো। ... একটা মানুষের জন্ম কীভাবে হয়েছে, তাকে তো আমরা অবহেলা করতে পারি না। তাকে আমরা ফেলে দিতে পারি না। তাদের আপন করে নিতে হবে।

বিশ্বব্যাপী অটিজম সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটুকু অন্তত বলবো সায়মা ওয়াজেদ যখন শুরু করলো এ অটিজম নিয়ে কার্যক্রম এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা শুরু করা জাতিসংঘে এটার ওপর রেজুলেশন নেওয়া। এ ধরনের কার্যক্রম করার ফলে আজকে শুধু আমাদের দেশে না সারা বিশ্বেই কিন্তু এ বিষয়গুলো মানুষ সাধারণভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে।  
 
যৌথ পরিবারে অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুদের বিকাশ ভালো হয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যৌথ পরিবারের কোনো শিশু যখন এ ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতো, তারা অনেক ভাই-বোন, আত্মীয়, পরিবার-পরিজন সবার সঙ্গে চলতে ফিরতে অনেক সময় এ সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবে দূর হয়ে যেত। এখন অবশ্য ছোট পরিবার, সুখী পরিবার হতে যেয়ে হয়তো একা একা, এক্ষেত্রে এদের মেধা বিকাশেরও সুযোগ হয় না। আর সুস্থ হওয়াও হয় না।

‘পারিবারিকভাবে আমি মনে করি যত বেশি এরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে, স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে, স্বাভাবিক ও একটি অটিজম শিশু একসঙ্গে যদি বড় হয় তার মধ্যে ধীরে ধীরে অনেকটা ভালো হয়ে যায়। এ বিষয়টা সবাইকে চিন্তা করতে হবে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত শিশুদের মধ্যে অটিজমটা একটু কম আছে বা যারা মিশতে পারে তাদের সাধারণ স্কুলে বা যারা প্রতিবন্ধী সাধারণ স্কুলে ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেই যদি একসঙ্গে মানুষ করা যায় এবং বড় করা যায়, সবার সঙ্গে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থেকে তারা কিন্তু নিজে থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে। সুস্থ হয়ে যায় তারা। তারা একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে শেখে, ঝগড়া করুক, বন্ধুত্ব করুক বা মারামারি করুক, যাই করুক তার মধ্যে দিয়েই কিন্তু তাদের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র আলাদাভাবে ব্যবস্থা করলেই চলবে না। তবে হ্যাঁ যারা একেবারে বেশি মিশতে পারে না, তাদের জন্য আলাদা থাকবে। কিন্তু যত বেশি আমরা তাদের অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে সুযোগ করে দেব। তত দ্রুত তারা সুস্থতা লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু।  

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অটিজমসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কারের সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
এমইউএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।