ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘স্ত্রী-সন্তান থেকেও নেই, মায়ের স্মৃতি আঁকড়ে জীবনযাপন আকবরের’

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
‘স্ত্রী-সন্তান থেকেও নেই, মায়ের স্মৃতি আঁকড়ে জীবনযাপন আকবরের’

কুষ্টিয়া: স্ত্রী-সন্তান, সংসার সব কিছুই থেকেও নেই আকবর আলীর। পেশায় একজন সেলুন দোকানি।

স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে স্ত্রী থাকেন বাড়ি ছেড়ে ঢাকায়। সেখানে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ছেলে থাকলেও আবকরের সঙ্গে থাকে না কেউ। বড় ছেলে সায়েদ থাকে মায়ের সঙ্গে, ছোট ছেলে সিয়াম থাকে নানির বাড়িতে।

আকবরের বাবা মারা যান ১০ বছর আগে। মায়ের সঙ্গে কোনো মতে বসবাস করতেন তিনি। অসুস্থতার কারণে বছর তিন আগে মারা যান আকবরের মা। তারপর থেকে একা আকবর আলী। সকালে উঠে মায়ের রেখে যাওয়া ভেড়াগুলোকে ঘর থেকে বের করে খেতে দিয়ে নিজে খেয়ে না খেয়ে সেলুনের দোকানে চলে যান। দুপুরে বাড়ি ফিরে আবারো ভেড়াগুলোকে খাবার দেন তিনি। তারপর নিজে রান্না করে খান। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে চলে যান দোকানে। এভাবেই চলছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছের আলীর ছেলে আকবর আলীর জীবন।  

অর্ধবয়স্ক আকবরের সংসার বলতে একাই। আঁকড়ে ধরে রেখেছেন মায়ের রেখে যাওয়া সাতটি ভেড়াকে। সেগুলোর যত্ন করা, নিজের কাজ করার মধ্য দিয়ে দিন পার হয় তার। স্ত্রী-সন্তান থেকেও নিস্বঙ্গ আকবরের চোখে এখনো স্বপ্ন স্ত্রী-ছেলেদের নিয়ে আবারো হাসিখুশি থাকবেন। কিন্তু তার সেই আশা হয়তো পূরণ নাও হতে পারে। তাই ভেড়াগুলোকে নিয়েই দিন কাটছে আকবরের।

উপজেলার আমলার ‘বন্ধন সংস্থা’ নামে একটি এনজিও সংস্থা থেকে আকবরের মা সাইদা খাতুন বিনামূল্যে দু’টি ভেড়া পেয়েছিলেন। অভাবের সংসারে মা-ছেলের আশা ছিল- ভেড়া পালন করে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হবে। কিন্তু কিছুদিন পরে মারা যান সাইদা খাতুন। মায়ের স্মৃতি ভেড়াগুলোকে আর নষ্ট করেননি তিনি। সেখান থেকে কয়েকটা ভেড়া বিক্রি করেও এখন সাতটি ভেড়া তার।

আকবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের সংসারে স্ত্রীও চলে গেছে ঢাকায়। ছেলেরাও থাকে না আমার কাছে। মা ছিল, তিনিও মারা গেছেন। কিন্তু মায়ের হাতের স্মৃতি হিসেবে ভেড়া ছিল। সেগুলো এখনো রয়েছে। সেগুলো নিয়েই এখন থাকি। সকাল-বিকেল আমলা বাজারে সেলুনের কাজ করি আর বাড়িতে এসে ভেড়ার পরিচর্যা করি।

তিনি বলেন, এখন আমার আপন বলতে এই ভেড়াগুলোই। আপন মানুষগুলো আর আপন নেই, আমার সবাই পর হয়ে গেছে।

আকবর আলী বলেন, একা মানুষ, মাঠে গিয়ে ভেড়ার জন্য ঘাস বা খাবার আনতে পারি না। তাই বাজার থেকে বিছালী (খড়), ভুসি, খুদের ভাত খাওয়ায়। ওরাই এখন আমার পরিবার। প্রথমে মা দেখাশোনা করতেন। এখন আমি করি। ভেড়ার রোগ বালাই কম এবং সব কিছুই খায়, তাই তেমন একটা অসুবিধাও হয় না। প্রয়োজনে প্রায়ই সেখান থেকে বিক্রিও করি।

আকবর বলেন, ভেড়া পালন খুবই লাভজনক। কারণ এরা দ্রুত বাচ্চা দেয়। আর বাজারে দামও বেশ ভালো পাওয়া যায় ছাগলের তুলনায়। মাঠে-ঘাটে তো কাজ করতে পারি না। আর মায়ের হাতের ভেড়াগুলোর প্রতি মায়ায় ছাড়তে পারিনি। এবার আশা করছি আরও কিছু ভেড়া বাড়িয়ে ছোট করে খামার দেব।



আকবর আলীর মতো ২০১৮ সাল থেকে আমলার বন্ধন নামে ওই সংস্থা মিরপুর উপজেলার এমন অসচ্ছল ৩৬টা পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে ৭২টা পরিবারকে ভেড়া বিতরণ করে। যা থেকে প্রায় তিন শতাধিক ভেড়া হয় পরিবারগুলোর।

মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ভারুল গ্রামের জুয়েল ও আম্বিয়া দম্পতিও বিনামূল্যে ভেড়া পেয়েছিলেন। সেখান থেকে তার বাড়িতে এখন পাঁচটি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া আরও ছয়টি তারা বিক্রি করেছেন।

বন্ধন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তাহাজ্জেল হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, দুস্থ, গরীব অসহায় পরিবারের মধ্যে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় ৩৬টি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে ৭২টি ভেড়া বিতরণ করেছি। যা থেকে বেড়ে প্রায় তিন শতাধিক ভেড়া হয়েছে। যা থেকে তারা আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।