ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাছের আঁশে আশার আলো

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
মাছের আঁশে আশার আলো মাছের আঁশ

নীলফামারী: আর ফেলনা নয়, এবার মাছের আঁইশ বা আঁশে আশার আলো জেগেছে মৎস্যজীবীদের মনে।  

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় মাছের আঁশ বিক্রি করে জীবিকার নতুন উৎস খুঁজে পেয়েছেন জেলেরা।

ওই আঁশ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল জেলেপাড়া গ্রামের কয়েকজন মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা হয়।  

অমল চন্দ্র দাস (৪০)। ওই গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বাড়ির উঠানে মাছের আঁশ পালা (স্তূপ করে রাখছিলেন) করছিলেন তিনি।  

অমল বলেন, হামরা মাছুয়া ব্যাহে মাছ মারি খাই, এর আগোত মাছের আইনশাগুলো (আঁশ) ফেলে দিছিনু। চিকলী বাজারের মাছুয়াও আইনশা ফেলে দিছিলো। এখন ওই আইনশাগুলা কুড়ি আনি, ওইলা বাড়িত পালা করি। তারপরত মহাজন এইলা নিয়া যায়। শুনছো, ওই আইনশা বিদেশত (রপ্তানি) যায়ছে। মানে আগে তারা মাছের আশঁ ফেলে দিতেন। কিন্তু এখন বাজার থেকে কুড়িয়ে এনে স্তূপ করে রাখেন, সেগুলো পরে মহাজন এসে কিনে নিয়ে যায়। এসব আঁশ রপ্তানি হয় বিদেশে।  

অমলের মতো জেলেপাড়ায় আঁশ সংগ্রহ করছেন সবুজ চন্দ্র দাস (৪১), জয়া রানী দাস (৩৫), নমিতা রানীসহ (৩৭) অনেকেই।

জেলেরা জানালেন, আদিকাল থেকেই তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এলাকার চিকলী, খড়খড়িয়া, বাকডোকরা, যমুন্বেশরীসহ বিভিন্ন নদী-জলাশয় থেকে মাছ ধরে তা পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন প্রতিদিন। গত দুই বছর আগেও মাছ ধরা ছিল তাদের জীবিকার একমাত্র পথ। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে মাছের আঁশ সংগ্রহের কাজ। এতে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে তাদের।

নমিতা জানান, গত দুই বছর আগে তিনি জানতে পারেন, বাজারে মাছের আঁশও বিক্রি হয়। সৈয়দপুর উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে এনিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন তিনি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনলাইন ঘেটে জেলেদের জানান, বিদেশে মাছের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খাদ্য ও গবেষণার কাজে তা ব্যবহার হয়ে থাকে। সেই থেকে নমিতারা নেমে পড়েন মাছের আঁশ সংগ্রহের কাজে।

সৈয়দপুর শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন বাজার থেকে এক একজন জেলে দিনে ১০ থেকে ১৫ কেজি মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। এসব বাড়িতে এনে নিজেরাই প্রক্রিয়াজাত করে মহাজনদের হাতে তুলে দেন।  

জয়া রাণী জানান, মহাজন বাড়িতে এসে ওজন করে মাছের আঁশ নিয়ে যান। প্রতিকেজি মাছের আঁশ বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। জেলেপাড়ার প্রায় প্রতিটি ঘরে ওই দৃশ্য চোখে পড়ে। ওই এলাকায় ৩০টি জেলে পরিবার রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খোন্দকার রাশিদুল হাসানের সঙ্গে এনিয়ে কথা হয়। তিনি জানান, মাছের আঁশ বিদেশে খুব উপাদেয় খাবার। স্যুপ তৈরিতে এসব আঁশের পাউডার ব্যবহার হয়ে থাকে। চীন ও জাপানে বাইয়োফিজো ইলেট্রনিক ন্যানো জেনারেটর তৈরির কাজেও তা ব্যবহার হয়। মানবদেহের কৃত্রিম হাড় ও চোখের কর্নিয়া তৈরিতেও বিজ্ঞানীরা এনিয়ে গবেষণা করছেন।  

তিনি বলেন, মাছের আঁশ নিয়ে আমাদের দেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ফলে মাছের আঁশে আশার আলো দেখছেন মৎস্যজীবীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।