ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ম্যাজিশিয়ান থেকে বাংলার মিস্টার বিন!

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
ম্যাজিশিয়ান থেকে বাংলার মিস্টার বিন!

ঢাকা: হাতে ট্যাডি (পুতুল), খয়েরি স্যুট-সাদা শার্টের মধ্যে লাল টাই আর চোখ-মুখ দেখেই চোখ আটকে যায়; একবার কেউ দেখলেই বলে উঠেন- এই যে মিস্টার বিন। কেউ বা সেলফি তোলেন।

যাদু শিল্পী বা ম্যাজিশিয়ান রাশেদ শিকদার, যার পরিচয় এখন ‘বাংলা মিস্টার বিন’ নামে।
 
ম্যাজিক শো করলেও মিস্টার বিন চরিত্রের কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে তার। ম্যাজিক আর মিস্টার বিন চরিত্রের অভিনয় দিয়ে মাতিয়ে তোলেন ছেলে-বুড়ো-শিশু সবাইকে।
 
পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার কাজিরহাট ফেরীঘাট এলাকার রাশেদ শিকদার বর্তমানে পাবনার এডওয়ার্ড সরকারি কলেজে বিএসএস পাস কোর্সে দ্বিতীয়বর্ষে পড়াশোনা করছেন। তবে লকডাউনের কারণে দুই বছর ধরে একইবর্ষে আটকে আছে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে চতুর্থ রাশেদ।
 
সম্প্রতি এক সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হয় রাশেদ শিকদারের সঙ্গে, কথা হয় ম্যাজিক এবং মিস্টার বিন চরিত্র নিয়ে।
 
বাংলানিউজ: মিস্টার বিনের মতো আপনার ফেস, এটার অনুভূতি কেমন?

 
রাশেদ শিকদার: এটা অনেকেই বলতো, যখন আমি ম্যাজিক দেখাতাম। প্রথমত আমি একজন ম্যাজিশিয়ান। মঞ্চে গেলে এরকম কোর্ট-টাই পরে উঠতাম। অনেকেই বলতো আপনার ফেসটা মিস্টার বিনের সঙ্গে মিলে যায়। আমি সেটাকে কখনও কানে ধরিনি। ২০১৬ সালে এম রহমান নামে একজন ম্যাজিশিয়ান পরামর্শ দিলেন- রাশেদ তুমি মিস্টার বিনের মতো কিছু করো। আমি গুরুত্ব দেয়নি। এভাবে সময় কেটে গেছে অনেক দিন। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আমি এটা (মিস্টার বিন চরিত্র) চেষ্টা করছি। ততক্ষণে এতদূরে আসা। মূলত এক বছরের চেষ্টায়।
 
বাংলানিউজ: মিস্টার বিন চরিত্র না ম্যাজিশিয়ান চরিত্র পছন্দ আপনার?
 
রাশেদ শিকদার: জনপ্রিয়তা আমার মিস্টার বিন দিয়ে। কিন্তু আমার পছন্দ ম্যাজিক। বৈশাখী টিভি চ্যানেলে অন্য রকমে প্রায় ছয় মাস ধরে একটি করে স্ক্রিপ্ট যায় মিস্টার বিনের।
 
বাংলানিউজ: মিস্টার বিন চরিত্র নিয়ে পরিকল্পনা?
 
রাশেদ শিকদার: মিস্টার বিন শুধু বিনোদন দিয়েছেন, শুধু হাসি আছে, কমেডি বা কৌতুক। আমি এমন স্ক্রিপ্ট করতে চাই যেটা থেকে মানুষ বিনোদিত হবে আবার কোনো না কোনো কিছু শিখতে পারবে। এরকম কিছু নিয়ে আমি মিস্টার বিনের প্যাটার্নে অভিনয় করে যেতে চাই। চেহারা দেখার পরেই আইডিয়া করে নিচ্ছে যে মিস্টার বিন। এটা অন্যরকম একটা ভালো লাগা।
 
বাংলানিউজ: ম্যাজিকের প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে?
 
রাশেদ শিকদার: ছোট বেলায় আমাদের স্কুলে এক ম্যাজিশিয়ান এসেছিলেন এবং ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন। তিনি মাটি দিয়ে অনেকগুলো ক্যান্ডি (চকলেট) বানিয়ে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি একটা ক্যান্ডি ধরতে পেরে খেলাম এবং খুব মজা লাগলো। তখন আমি ভাবলাম যে এটা যদি শিখে নেই তাহলে তো আর ক্যান্ডি কিনে খেতে হবে না। মূলত সেই লোভ থেকেই যাদুর প্রতি আগ্রহ। ১২ বছর থেকে ম্যাজিক দেখাচ্ছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেছি ২০১০ সালে। তার আগে ম্যাজিক করতাম নিজের মতো করে। ২০১৭ সাল থেকে বিটিভির যাদু বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘চোখের পলকে’ আছি। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ম্যাজিক ফেডারেশনের সদস্য, ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অব ম্যাজিশিয়ানস (যুক্তরাষ্ট্র)।
 
বাংলানিউজ: কতগুলো ম্যাজিক দেখাতে পারেন?
 
রাশেদ শিকদার: এই সংখ্যা বলা কঠিন। কারণ ১২ বছর ধরে ম্যাজিক করি। তবে অন্তত ১০ থেকে বারোশ’ বা তারও বেশি ম্যাজিক দেখাই। আমার পুরো চরিত্রটাই ম্যাজিশিয়ানের।
 
বাংলানিউজ: প্রথম ও ভালো লাগার ম্যাজিক কোনটি?
 
রাশেদ শিকদার: আগেকার কিছু মুরব্বি আছেন যারা ম্যাজিকের মতো অনেক কিছু জানেন, কিন্তু সেগুলো ম্যাজিক না। ওই রকম কিছু কেউ দেখালে আমি তার পেছনে ঘুরতে শুরু করতাম। আমি একটা বই কিনি, বইয়ে বর্ণনাকৃত ১২ ম্যাজিকের মধ্যে আটটটি নিজেই তৈরি করে ফেলেছিলাম। সেগুলোর অধিকাংশই তাস ও টাকা নিয়ে। কাগজ থেকে টাকা তৈরি ছিল প্রথম ম্যাজিক। সোর্ড বক্স ভালো লাগার ম্যাজিক। একটা বক্সের মধ্যে মানুষ ঢুকিয়ে দিয়ে ২১টি সোর্ড (তরবারি) ঢুকিয়ে দেওয়া খুব ভালো লাগে।
 
বাংলানিউজ: ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
 
রাশেদ শিকদার: ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল শিল্প-সংষ্কৃতি নিয়ে কিছু করা। কিন্তু এখন যা বুঝছি শিল্প-সংষ্কৃতি নিয়ে এগোলে কতটুকু কী হবে, পেশাগতভাবে নিলে কতটুকু কী হবে সেটা চিন্তা করিনি। তবে আমি সুস্থ বিনোদন দিতে চাই মানুষকে। মিস্টার বিন হোক আর ম্যাজিশিয়ানই হই, এই দুটোকে আমি সখ হিসেবে দেখতে চাই। পেশা এখনও ভাবিনি।
 
বাংলানিউজ: উৎসাহ কে দিয়েছেন?
 
রাশেদ শিকদার: পরিবারের সবাই সাপোর্ট করেছে। তবে প্রধান অবদান আমার বড় ভাইয়ের।
 
বাংলানিউজ: ম্যাজিক কিংবা মিস্টার বিন চরিত্রে অর্জন?
 

রাশেদ শিকদার: ২০২০ সালে বাংলাদেশ-আমেরিকা ম্যাজিক সোসাইটি আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল ম্যাজিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। বিভিন্ন ম্যাজিক প্রতিযোগিতায় স্থান পেয়েছি।
 

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।