ঢাকা: আসাদুল ইসলাম (২৬) একজন পোশাক শ্রমিক। ২০২০ সালে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বৃষ্টি আক্তারকে (২৩) বিয়ে করেন।
সেই সঙ্গে অন্য মেয়েদের সঙ্গেও মোবাইল ফোনে, ইমোতে ভিডিও কল ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ ছিল তার। গত ১৩ জানুয়ারি আসাদের মোবাইল ফোনে অন্য নারীর অপ্রীতিকর ছবি, কথপোকথন দেখতে পেয়ে রাগে মোবাইল ভেঙে ফেলে বৃষ্টি। আসাদও ক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টির কিস্তির টাকায় কেনা টেলিভিশন ভেঙে ফেলে। এক পর্যায়ে বৃষ্টির গলা টিপে ধরে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা আসাদ।
এতেই ক্ষান্ত হয়নি সে, ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বৃষ্টিকে ঝুলিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে ঘাতক আসাদ। এরপর নিজের মা ও ফুপুকে ঘটনাটি জানিয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
এরপর গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে বৃষ্টি আক্তার নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানার পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাতনাম কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের পরিবার।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি জানান, ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি হলে র্যাব-৪ ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর রোববার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুনি মো. আসাদুল ইসলামকে (২৬) গ্রেফতার করে তারা।
সিও মো. মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আসাদুল জানায়, নিহত মোসা. বৃষ্টি আক্তারের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল গ্রামে। ২০১২ সালে বৃষ্টির প্রথম বিয়ে হয়। সেই ঘরে তার ৬ বছর ও ৪ বছরের দুটি মেয়ে আছে। তারা বৃষ্টির বড় বোন আকলিমার কাছে থাকে। ২০১৯ সালে বৃষ্টির প্রথম স্বামী না জানিয়ে অন্য এক নারীকে বিয়ে করে। এরপর বৃষ্টি তাকে তালাক দেয়। পরে গাজীপুরে বোনের সঙ্গে থেকে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি নেয়। সেখানে আসামি আসাদুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
তিনি বলেন, আসামি আসাদুল একজন লোভী মানুষ। বৃষ্টির তালাকের পর দেনমোহরের টাকার জন্য কৌশলে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখায় এবং ২০২০ সালে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেন।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির প্রথম স্বামীর দেন মোহরের টাকা এবং মাসিক বেতন হাতিয়ে নেয় আসাদুল। এনিয়ে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। পরে তারা গাজীপুর থেকে আশুলিয়ায় এসে একটি ভাড়া বাসায় ওঠে এবং সেখানের একটি গার্মেন্টেসে চাকরি নেয়। আসাদুলের বিকাশে দুইজনের বেতন জমা হত। কিন্তু সেখান থেকে বৃষ্টিকে কোনো টাকা বা খরচ দিত না। এতে বৃষ্টি প্রথম পক্ষের দুই সন্তানকে কোনো খরচও দিতে পারতো না।
ৎএই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ১৪ জানুয়ারি বিকেলে আসাদের ফুপু বৃষ্টির বড় বোন আকলিমাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বৃষ্টি অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি আছে, আসলেই দেখতে পাবেন। এই বলেই মোবাইল তিনি ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর সন্ধ্যায় আসাদের মা বৃষ্টির পরিবারকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলে সে মারা গেছে। তিনিও মোবাইল বন্ধ করে দেন।
১৫ জানুয়ারি বৃষ্টির পরিবারের কয়েকজন মিলে আসাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যায় এবং তার মাকে আসাদের ঠিকানা দেওয়ার জন্য চাপ দিলে আশুলিয়ার বাসার ঠিকানা পায়।
এরপর ওইদিন দুপুরের দিকে বৃষ্টির আপন ভাই ও খালাতো ভাই আশুলিয়ায় সরকার বাড়িতে গিয়ে দরজা তালাবদ্ধ পেয়ে নিচের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পা দেখতে পেয়ে আশুলিয়া থানায় জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙে বৃষ্টির মরদেহ উদ্ধার করে।
র্যাব-৪ এর সিও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আসাদ বৃষ্টিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য তাকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড