ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাসে ডাকাতি: অভিযোগ না নেওয়া পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
বাসে ডাকাতি: অভিযোগ না নেওয়া পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ঢাকা: রাতভর চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম ও তার বন্ধুকে বাসে মারধর ও অর্থ লুটে নেওয়া ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে যেসব থানার দায়িত্বরতরা ভুক্তভোগীর করা অভিযোগ নেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) কে এম হাফিজ আক্তার।

গত ২০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে আর কে আর পরিবহনে ওঠার পর ভয়ানক এক ডাকাত চক্রের কবলে পড়েন একজন চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম ও তার বন্ধু। তাদের ১২ ঘণ্টা বাসে ঘুরিয়ে মারধর করে নগদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, মোবাইলের বিকাশ থেকে ৫ হাজার ও দুটি এটিএম কার্ড থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুটে নিয়ে মাতুয়াইলে সড়কের পাশে তাদের ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। ভুক্তভোগী মো. শফিকুল ইসলাম টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে কর্মরত।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হলে রোববার রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ।

গ্রেফতার ডাকাত সদস্যরা হলেন—মো. নাঈমুর রহমান ওরফে নাঈম, মো. আবু জাফর ওরফে বিপ্লব, সজিব মিয়া, জহুরুল ইসলাম, মো. আলামিন, দিলিপ ওরফে সোহেল, মো. আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া আচ্ছাদ। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাপাতি, লোহার বাটযুক্ত ৪টি ছুরি, বিভিন্ন সাইজের ৫টি লোহার টুকরা রঙ, চোখ বাঁধার কাজে ব্যবহৃত ৩টি গামছা, বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন ১০টি, খেলনা পিস্তল ২টি ও নগদ ১ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ডাকাতির ঘটনার পর বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দিতে ওই চিকিৎসক ঘুরেছেন, কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। কিন্তু তিনি প্রথমে কোনো আইনি সহায়তা পাননি।

ডাকাতির ঘটনার পর ভুক্তভোগী কীভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বাসে ডাকাতির ক্ষেত্রে চলার পথ থেকে শুরু করে বাসটি যে এলাকা দিয়ে যাবে এবং বাসটি যে এলাকায় যাত্রা শেষ করবে সেসব এলাকার যে কোনো থানায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে পারবেন। এই ঘটনায় মামলা নেওয়ার গড়িমসি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। যে কোনো ঘটনা ঘটলেই অভিযোগ নিতে হবে। না হলে আমরা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারব না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছি। এরপরই গ্রেফতারদের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, ডাক্তার সাহেব গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করে গেছেন। তিনি যেহেতু উত্তরা থেকে উঠেছেন সেজন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা না হলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর যেসব থানা প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে চায়নি তারা হয়তো চিন্তা করেছে বাসটি কোথা থেকে আসছে, কীভাবে গ্রেফতার করবে এসব বিষয়। তবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ওইসব থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

ডাকাতির মামলা বেশি হয়ে গেলে ডিএমপির পক্ষ থেকে ওই সংশ্লিষ্ট থানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন কোনো নির্দেশনা আছে কিনা? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো চাপ ডিএমপির পক্ষ থেকে নেই। যে কোনো ঘটনার মামলা থানাকে অবশ্যই নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ডাকাতির মামলা নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু এই বিষয়ে শক্তভাবে বলা হয়েছে, মামলা নিতে, না হলে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাবে। আরও বলা আছে, সম্পত্তি বিষয়ক যে কোনো অপরাধের অভিযোগ নিতে।

মামলা না নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ডাকাতির ঘটনার ভুক্তভোগীদের থানা থেকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। আর যেসব থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। এসব ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ডাকাতি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এই বিষয়গুলো আমরা দেখছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এসব ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানাকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, ডাকাতি মামলা নেওয়া যাবে না। শক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যে কোনো ঘটনায় মামলা নিতে হবে। এসব বিষয়ে গতকাল আমাদের ক্রাইম কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। আর সেখান থেকে এসব বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতার অভাবে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোনো অপরাধ ঘটে এর আগে কিন্তু অপরাধীরা নিরাপদ এলাকা বেছে নেয়। বাসটি যখন ১২ ঘণ্টা ঘুরছিল এবং ডাকাতি হচ্ছিল তখন বাসটিকে নজরদারিতে আনা হয়নি। যখনই এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে তখনই আমরা তৎপরতা শুরু করি। তারপর এসব ঘটনা আবার কমে যায়। এখানে আমরা কারো অবহেলার বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না, আমরা যদি ঠিকভাবে এগুলা নজরদারিতে রাখি, তাহলে অটোমেটিক্যালি এসব ঘটনা কমে যাবে। আর যেসব গ্রে এরিয়া আছে সেগুলোতে আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা এমন কোনো তথ্য দিয়েছে কিনা যে হাইওয়ে পুলিশ তাদের সহায়তা করে ডাকাতির সময়, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের দেয়নি গ্রেফতাররা যে, ডাকাতিকালে তাদের পুলিশ সহায়তা করে।

তিনি বলেন, আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা পরিকল্পিতভাবে আর কে আর পরিবহনের ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যান। সেখান থেকে ডাকাতরা প্রথমে বাসচালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেরাই বাসটি চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ঘুরতে থাকেন এবং টার্গেট করে যাত্রী ওঠান। পরবর্তীতে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে, হাত-মুখ বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে সকালের দিকে বিভিন্ন নির্জন স্থানে নামিয়ে দেন। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, এই চক্রটি ঢাকা জেলার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে একইভাবে ডাকাতি করে থাকে।

১২ ঘণ্টা ধরে বাসটিতে ডাকাতি চলল, কোনো একটি পুলিশ চেকপোস্ট সেটি ধরা পরেনি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, রাতে অনেক গাড়ি একসঙ্গে চলাফেরা করে। দেখা যায়, রাস্তায় ৫০০টি গাড়ি একসঙ্গে চলছে। এর মধ্যে একটি বাসে ডাকাতি হচ্ছে। সে কারণে তারা নজরদারিতে আসেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।